× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

লিডিং ইউনিভার্সিটির প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাস্টি বোর্ড

চয়ন চৌধুরী, সিলেট

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৩ ১৩:১২ পিএম

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩ ১৩:১৫ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

সিলেটের আলোচিত শিল্পপতি রাগীব আলীর ছেলে সৈয়দ আব্দুল হাই প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ভারতীয় নাগরিক সাদিকাকে বিয়ে করেন। এই দুটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিবাহবন্ধনে উভয় দেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। যদিও আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে বিয়ের সময় সাদিকার ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি।

এদিকে বিয়ের পর শ্বশুরের প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি লিডিং ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য হন সাদিকা। ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সিলেট সদর রেজিস্ট্রি অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনের সময় তার ঠিকানা মালনীছড়া চা-বাগান উল্লেখ করা হয়। যদিও দলিলে শ্বশুর রাগীব আলী ও স্বামী আব্দুল হাইয়ের ঢাকার গুলশান-২-এর ৭৬ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাসার ঠিকানা দেওয়া হয়। 

ভারতীয় নাগরিকের পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও বেতনভুক্ত কর্মচারীদের নিয়ে লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করায় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এজন্য কোম্পানি আইনের নিয়মে যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বোর্ডের নিবন্ধন না করায় দীর্ঘ ১৬ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

২০০৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতির মেয়াদ শেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ধারা ৯ অনুযায়ী সরকারি সনদ গ্রহণ করা হয়নি। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে স্থায়ী সনদ গ্রহণ বা সাময়িক মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনে ব্যর্থ হলে কার্যক্রম বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১ শাখার উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে তা উল্লেখ করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশি নাগরিকের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে সাদিকার শ্বশুর বা স্বামীর ঠিকানা ব্যবহার করা হয়নি। পরিচয় গোপন করার জন্য অবৈধভাবে তৈরি করা জন্মনিবন্ধনে ব্যবহৃত মালনীছড়া চা-বাগানের ঠিকানা দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় নাগরিক সাদিকার নামে জালিয়াতি করে তৈরি জন্মনিবন্ধনের ঠিকানা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি গঠন করা হয়েছে। গত ৭ মার্চ সাদিকা ভারতীয় পাসপোর্ট নবায়ন করতে যাওয়ার পর তার বাংলাদেশি জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর জন্মনিবন্ধন সনদ প্রভাব খাটিয়ে সার্ভার থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

শুধু ভারতীয় নাগরিক সাদিকা নয়, লিডিং ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান রাগীব আলী থেকে শুরু করে অন্তত ছয়জনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হওয়ার বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। এদের মধ্যে রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই জালিয়াতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

২০১৭ সালে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত নগরীর সংলগ্ন দেবোত্তর তারাপুর চা-বাগানের বন্দোবস্ত নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির মামলায় বাবা ও ছেলেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন। বর্তমানে উচ্চ আদালতের জামিনে থাকা রাগীব আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ছেলে আব্দুল হাই দ্বিতীয় সদস্য। আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী ভারতীয় নাগরিক সাদিকা পঞ্চম সদস্য। এ ছাড়া ১০ম ও ১১তম সদস্য হিসেবে যথাক্রমে রয়েছেন দেওয়ান সাকিব আহমেদ ও মো. জাকির হোসেন।

এদের মধ্যে সাকিব আহমেদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) হিসেবে বেতনভুক্ত। একইভাবে জাকির হোসেন লিডিং ইউনিভার্সিটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। লিডিং ইউনিভার্সিটির চলতি বছরের ডায়েরিতেও তাদের এই পরিচয় উল্লেখ রয়েছে।

বাংলাদেশের ট্রাস্ট আইন ১৮৮২ অনুযায়ী, ট্রাস্টি সদস্য ট্রাস্টের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। অথচ সাকিব ও জাকির দুজনই লিডিং ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত হিসেবে বেতনভুক্ত। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের দলিলে তারাপুর চা-বাগানের বাসিন্দা সাকিবের পিতা কাশিনাথ পাশী উল্লেখ রয়েছে। আর জাকির মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার লংলা খাস এলাকার মো. সাচ্চু মিয়ার ছেলে। 

২০১৮ সালে সিলেট রেজিস্ট্রি অফিসের নিবন্ধন অনুযায়ী লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে আরও রয়েছেন অধ্যাপক ড. এম আর কবির, অধ্যাপক ড. এএনএম মেসকাত উদ্দিন, বনমালী ভৌমিক, সৈয়দ রাফে হাই, আখতারুজ্জামান, সৈয়দ আব্দুল হান্নান ও শায়কুল হক চৌধুরী।

এ ছাড়া পদাধিকার বলে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মাওলা সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে বনমালী ভৌমিক বর্তমানে লিডিং ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। এই পদে তার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভুক্ত হওয়ায় বোর্ডে তার থাকার সুযোগ নেই। দলিলে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন শেষ হলে বনমালী বোর্ডের সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে উল্লেখ আছে। 

একইভাবে লিডিং ইউনিভার্সিটির অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদারের দায়িত্ব পালনকারী আখতারুজ্জামান নির্মাণকাজ শেষে ট্রাস্টি বোর্ডের সক্রিয় সদস্য হবেন। দলিলে ট্রাস্টি বোর্ডের যে ১৩ জন সদস্য হিসেবে রয়েছেন তাদের মধ্যে আব্দুল হাইয়ের প্রথম পক্ষের ছেলে রাফে হাই ও রাগীব আলীর ভাতিজা আব্দুল হান্নান রয়েছেন। তবে শ্বশুর রাগীব আলীর বার্ধক্য ও স্বামী আব্দুল হাইয়ের নানা অসুস্থতার জন্য সাদিকা কার্যত পরিবারের পক্ষে ট্রাস্টি বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করেন।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আজিজুল মাওলাকে দায়িত্ব গ্রহণে বাধা দেওয়ার নেপথ্যে সাদিকার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাজ্য সফর শেষে ফিরে দায়িত্ব গ্রহণে কোষাধ্যক্ষ বনমালীর বাধার সম্মুখীন হন উপাচার্য। 

এদিকে যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধনে ব্যর্থতার পাশাপাশি লিডিং ইউনিভার্সিটির তহবিলে লেনদেনে নানা অনিয়ম পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরী কমিশন লিডিং ইউনিভার্সিটির ৬৮টি লেনদেনে অনিয়মের বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার বরাবরে চিঠি দেয়।

২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর মঞ্জুরী কমিশন সরেজমিনে তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন লেনদেনে অনিয়ম পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তলব করে। গত ১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১ শাখার উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ‘লিডিং ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনীত আর্থিক অনিয়মসংক্রান্ত’ চিঠিতে আর্থিক অনিয়মের বিপরীতে কাগজপত্র চেয়েছেন।

এ বিষয়ে সাদিকা জান্নাত চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি দেশের বাইরে থাকায় তা সম্ভব হয়নি। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, যেকোনো দেশের নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশিদের বিয়ে হতে পারে। তবে একত্রে বসবাসের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয় রয়েছে।

লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে জানতে কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মাওলা।

তিনি বলেন, অন্যান্য প্রস্তুতি থাকলেও ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে জটিলতার জন্য চূড়ান্ত নিবন্ধন এখনও হয়নি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা