× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্মুখযুদ্ধের নায়ক রহমত আলী মন্টু

ঝিনাইদহ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৩:৫৯ পিএম

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৩ ২১:৩৪ পিএম

রহমত আলী মন্টু।

রহমত আলী মন্টু।

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকের প্রতিরোধ যুদ্ধগুলোর অন্যতম ঝিনাইদহের বিষয়খালীর যুদ্ধ। এটি স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের ঘটনা। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল বিষয়খালী বাজারে এ যুদ্ধ হয়। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশকয়েক সৈন্য হতাহত হয়। এরপর শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ সেতুর যুদ্ধে ৫০-৬০ হানাদার সেনা হতাহত হয়।

এরকম একাধিক স্থানে সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন শৈলকুপার বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী মন্টু। পরে আলফাপুরের এক যুদ্ধে পরিখায় থাকা অবস্থায় পাকিস্তানি বাহিনীর মর্টার শেল এসে পড়ে মন্টুর ঘাড়ে। এতে প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গু হয়ে যান তিনি।

একাত্তরের উত্তাল মার্চে পাকিস্তান নৌবাহিনীর বয়েজ সৈনিক পদের চাকরি থেকে ছুটিতে এসে আর ফিরে যাননি রহমত আলী মন্টু। যোগ দেন মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার লড়াইয়ে। 

ঝিনাইদহের শৈলকুপার দামুকদিয়া গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে রহমত আলী মন্টুর জন্ম ১৯৪১ সালে। দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় যোগ দেন নৌবাহিনীতে। চাকরির ১৫ বছর পর আসে ১৯৭১ সাল। চারদিকে প্রতিরোধের দামামা। উপেক্ষা করতে পারেননি রহমত আলী। ছুটি নিয়ে চলে আসেন বাড়ি। চাকরিতে ফেরাতে বারবার এসেছে ওয়ারেন্ট, কিন্তু রহমত আলী মন্টু আর ফিরে যাননি।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে যুদ্ধাহত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মার্চে চাকরি ছেড়ে শৈলকুপার গ্রামে গ্রামে সদস্য সংগ্রহ শুরু করি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের জন্য। ৫০-৬০ জনের এক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের পর তাদের ট্রেনিং দিতেন আনসার সদস্যরা। এদের নেতৃত্বে ছিলাম আমিসহ আমির হোসেন ও নায়েব আলী সর্দার। সবার নেতা ছিলেন ঝিনাইদহের এসডিপিও (মহকুমা পুলিশ অফিসার) মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম।

রহমত আলী মন্টু সেই সময়কার ঘটনাবলি তুলে ধরে বলেন, ‘শৈলকুপার গ্রামে গ্রামে সদস্য সংগ্রহ, সংগঠিত করা, ট্রেনিং করানো ছিল প্রধান কাজ। এসব করতে করতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে বিষয়খালী প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়া ছিল দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের ঘটনা।’

তিনি বলেন, যশোর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের বিষয়খালী বেগবতী নদীর ওপর সেতুটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যশোর থেকে একটি সুসজ্জিত পদাতিক কোম্পানিকে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে বিষয়খালী সেতুতে আটকে দেয় মুক্তিবাহিনী। সেই যুদ্ধে হানাদারের মর্টার শেলে আমার বন্ধু মাহবুবুল ইসলাম পিটিসহ অনেকেই গুরুতর আহত হন। চুটলিয়া মোড়ে শহীদ হন কয়েক মুক্তিযোদ্ধা। এসময় বহু পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়েছিল।

তিনি জানান, এরপর এপ্রিলে তিনিসহ মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় একই কায়দায় গাড়াগঞ্জ সেতুর রাস্তার পাশে পরিখা খনন করেন। সেতুটি তারা ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেন, সংযোগ সড়কে বালু-চুন দিয়ে মরণফাঁদ তৈরি করেন। এখানেই আটকা পড়েছিল ৬০-৭০ জন পাকিস্তানি; যারা বিভিন্নভাবে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে ও মারা যায়। 

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্টু বলেন, অবস্থানগত সুবিধার জন্য যুদ্ধের এক পর্যায়ে অক্টোবরে শৈলকুপার আবাইপুরে আমাদের বড় একটি দল অবস্থান করে ক্যাম্প তৈরি করি এবং দীর্ঘদিন হানাদার মুক্ত রাখি। তবে ১৪ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর জানতে পেরে আচমকা হামলা চালায় হানাদার বাহিনী। এতে নজরুল ইসলামসহ ১৬ বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ মোট ৪১ জন শহীদ হন।

মন্টু শৈলকুপার আলফাপুরে পরিখায় থাকার সময় হামলার শিকার হন হানাদারদের। তাদের ছোড়া মর্টার শেল এসে পড়ে তার ঘাড়ে। এতে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি। প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই থেকে আজও অসুস্থ জীবনযাপন করছেন এই যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। 

স্ত্রীসহ চার ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে এই বীর যোদ্ধার পরিবার। তিনি ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে শৈলকুপা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। 

শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি জানান, তার অবস্থা বেশি ভালো নয়। ব্রেন স্ট্রোকে ভুগছেন তিনি। তার স্ত্রী কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত আর একটা ছেলে প্রতিবন্ধী। বর্তমানে তাদের নিয়ে শৈলকুপা পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পরিত্যক্ত কলোনিতে জীবনযাপন করছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা