× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চট্টগ্রামে শব্দদূষণ

পুলিশের হাতে আইন নেই, পরিবেশ দপ্তরে নেই লোক

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩ ১৫:০৮ পিএম

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৩ ১৬:৩৪ পিএম

পুলিশের হাতে আইন নেই, পরিবেশ দপ্তরে নেই লোক

চট্টগ্রামে শব্দদূষণের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপে। শহরজুড়ে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি দূষণের তথ্য এসেছে। এর জন্য অনেকগুলো কারণ থাকলেও সবচেয়ে বড় কারণ মনে করা হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্নকে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকার পরও নগরের পরিবহনগুলোতে এর আধিক্য রয়েছে। একে শব্দসন্ত্রাস বলে মন্তব্য করছেন নাগরিকরা।

ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকলেও তারা বলছেন, আইনগত জটিলতায় তারা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। আর যাদের হাতে এই ক্ষমতা, সেই পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই পর্যাপ্ত লোকবল। পরিবেশ অধিদপ্তর নগরীর ৩০টি এলাকায় নিয়মিত শব্দের মাত্রা পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ১৫টি নীরব এলাকা, সাতটি আবাসিক এলাকা, ছয়টি বাণিজ্যিক এলাকা এবং দুটি মিশ্র (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) এলাকা রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের জরিপে গত ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে কম শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকায়, ৬৫ ডেসিবল। বিধি অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তর ঘোষিত ‘নীরব এলাকা’ এটি। অন্য নীরব এলাকাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং একে খান মোড়ের আল আমিন হাসপাতালের সামনে সর্বোচ্চ ৭২ দশমিক ৫০ ডেসিবল পাওয়া গেছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী এসব এলাকায় শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা সর্বোচ্চ ৪৫ ডেসিবল। 

৩০টি এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে বাণিজ্যিক এলাকা বহদ্দারহাট মোড়ে, ৭৯ ডেসিবল। আগ্রাবাদ মোড়ে ৭৬ ডেসিবল, জিইসি মোড়ে ৭৫ ডেসিবল। অন্যদিকে আবাসিক এলাকাগুলোর মধ্যে আমিরবাগে ৭৩ দশমিক ৫০, হালিশহর কে ব্লকের সামনে ৭৩ দশমিক। বিধি অনুযায়ী, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় গ্রহণযোগ্য মাত্রা সর্বোচ্চ যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবল।

শব্দের উৎস সম্পর্কে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের উপপরিচালক কামরুলে হাসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নির্মাণকাজ, যানবাহনের হর্ন, মাইকে লাউড স্পিকারের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার অন্যতম।

শব্দকে বলা হয় নীরব ঘাতক। লম্বা সময় অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকলে হাইপার টেনশন, আলসার, হৃদরোগ, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি হ্রাস, স্নায়ুর সমস্যা ও মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। চিকিৎসকরা বলেছেন, শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আশিকুর রহমান নিপু বলেন, অতিরিক্ত শব্দদূষণে মানুষ অনেক সময় স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে। চিকিৎসা করেও আর ফিরিয়ে আনা যায় না। নিয়মিত বেশি মাত্রার শব্দের মধ্যে থাকা মানুষের মধ্যে খিটখিটে ভাব দেখা দেয়।

গত ২২ মার্চ শব্দদূষণ প্রতিরোধ আইন কঠোর প্রয়োগের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ৩০টি সংগঠন। এর আয়োজকদের অন্যতম একজন হলেন আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান। কয়েক বছর ধরে ‘শব্দসন্ত্রাস’ বন্ধের দাবিতে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তিনি।

প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘শহরের ভেতর শব্দদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হাইড্রোলিক হর্ন। আরও অনেক কারণ রয়েছে। যেমন জামালখান নীরব এলাকা। কিন্তু সেখানে দূষণ আরও বেশি। প্রতিনিয়ত লাউড স্পিকার ব্যবহার হচ্ছে। এই দূষণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণে কেউ আন্তরিক নয়। বিভিন্ন সময় কর্মসূচি পালন করলে লোক দেখানো কিছু অভিযান করে।’

হাইড্রোলিক হর্নকে শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় উৎস বলে মনে করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) নাসির উদ্দিনও। নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগ কোনো ভূমিকা রাখছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হর্ন কতটা শব্দ করছে তা মাপার ক্ষমতা আইনে আমাদের দেওয়া হয়নি। এই ক্ষমতা শুধু পরিবেশ অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে। এমনকি জেলা প্রশাসনকেও না। ফলে অভিযান চালাতে হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিতে হয়। আমরা তাদের চিঠি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযান করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো তাদেরও লোকবল যথেষ্ট না। যদিও হাইড্রোলিক হর্নের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের ওপর। কাজেই এ বিষয়ে আমরা আন্তরিক না এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।’

লোকবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের উপ-পরিচালক কামরুলে হাসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত লোকবল না থাকা একটা সমস্যা। সচেতনতার জন্য আমরা বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন স্তরের গাড়িচালকদের সম্পৃক্ত করছি। এ থেকে ইতিবাচক ফল আশা করছি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা