মোস্তফা সিদ্দিক, গাইবান্ধা
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৫৩ পিএম
লুৎফর রহমানের।
অর্থকষ্টে দিন চলে না গাইবান্ধার আলোচিত এক টাকার মাস্টার লুৎফর রহমানের। রমজান মাস উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের ছুটি ঘোষণা করেছেন তিনি। এতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া ১ টাকার ওপর নির্ভরশীল এই মাস্টার আর্থিক কষ্টে আছেন। তার নাওয়া খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ইফতার করেন পানি মুখে দিয়ে, আর সেহরি করেন নুন মরিচের ভাত খেয়ে।
গাইবান্ধার সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছে বাগুড়িয়া গ্রামে বসবাস করেন মাস্টার মো. লুৎফর রহমান। এর আগে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার আগে ব্রহ্মপুত্র নদীতে তার ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। অতিকষ্টে ১৯৪৮ সালে গুনভড়ি স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন।
১৯৭২ সালে বন্যার সময় দ্বিতীয়বার বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেলে পরিবার আর কয়েকটি টিন নিয়ে এসে বাগুড়িয়া বাঁধের কাছে ঠাঁই নেন। গাইবান্ধা শহরের ব্রিজ রোডে একটি কাপড় ধোলাইয়ের দোকানে আয়রনম্যান হিসেবে কাজ শুরু করেন। অল্প আয়ের কারণে কাজ বদল করতে বাধ্য হন তিনি। এরপর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলপর্যায়ের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। এতে যে আয় হয় তাতেও তিন বেলা খাবার জোটে না। মহৎ মনের মানুষটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১ টাকা করে নেন। কোনো শিক্ষার্থীর টাকা দেওয়ার সামর্থ্যও থাকে না। তাই বলে কারও পড়ালেখা বন্ধ হয়নি তার কাছে।
লুৎফর রহমান জানান, শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। দরিদ্র ঘরের সন্তানরা পয়সার জন্য পড়ালেখায় পিছিয়ে থাকে। এই চিন্তা থেকেই তিনি স্কুল কার্যক্রম শুরু করেন। কাকডাকা ভোর থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। স্থানীয় ভাষারপাড়া, চন্দিয়া, খোলাহাটি, সৈয়দপুর ও বাগুড়িয়া গ্রামের নদীর তীরে ৫টি কেন্দ্রে পাঠদান করে থাকেন তিনি। মাটিতে চট বিছিয়ে চারপাশে গোল হয়ে বসে শিক্ষার্থীরা। প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন পড়ালেখার বিনিময়ে লুৎফুর রহমানকে ১ টাকা গুরুদক্ষিণা দিয়ে থাকে। এ কারণে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে এক টাকার মাস্টার হিসেবে।
মাস্টারের স্ত্রী বলেন, এই টাকায় সংসার চলে না। অভাব অনটন লেগে থাকে। এক ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকে। আরেক ছেলেকে এতিমখানায় ভর্তি করা হয়েছে।
মাস্টারের এক সময়ের ছাত্র জাহেদুল ইসলাম বলেন, তিনি আমার হাতেখড়ি দিয়েছেন। এখন কলেজে শিক্ষকতা করি। আমাদের সবার পরিচিত এক টাকার মাস্টারের আর্থিক কষ্ট দূর করা গেলে সুস্থ শরীরে আরও অনেক দিন শিক্ষকতা করতে পারবেন তিনি। স্কুল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। তার হাতে কোনো টাকা-পয়সা, জমানো ধান চাল নেই।