× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খাদ্য ও পানির সংকটে বন ছেড়ে লোকালয়ে বন্যপ্রাণী

মৌলভীবাজার প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩ ১১:৪৪ এএম

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৩ ১১:৪৪ এএম

মৌলভীবাজারে উদ্ধার করা একটি মেছো বাঘের সেবা-শুশ্রূষায় ব্যস্ত দুজন। প্রবা ফটো

মৌলভীবাজারে উদ্ধার করা একটি মেছো বাঘের সেবা-শুশ্রূষায় ব্যস্ত দুজন। প্রবা ফটো

অবাধে বনাঞ্চল উজাড়, আয়তন কমে যাওয়া, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাওয়া, তীব্র খাদ্য ও পানির সংকট ইত্যাদি কারণে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে চলে আসছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী।

অনেক সময় মানুষের হাতে ধরা পড়ছে এসব প্রাণী। কখনও কখনও আতঙ্কিত হয়ে লোকজন মেরে ফেলছেন লোকালয়ে আসা বন্যপ্রাণীগুলোকে। আর পাখিগুলো কিছু মানুষের খাবারের বস্তু হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া বন এলাকার সড়ক ও রেলপথে প্রতিনিয়তই বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। তবে সচেতন মানুষ লোকালয়ে বন্য কিংবা বিপন্ন প্রাণী দেখলে বন বিভাগসহ প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করছে, এমন সংস্থাগুলোকে খবর দিচ্ছেন। এতে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হচ্ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসাবমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুই সহস্রাধিক বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পাখি। পরে জীবিত প্রাণীগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক প্রাণী মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জীবিত ও মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৯২টি প্রাণী ও পাখি। এর মধ্যে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ প্রজাতির ৪২টি প্রাণী ও পাখি। আর মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ১টি মায়া হরিণ ও ৪৯টি পাখি।

লাউয়াছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করছে, এমন কয়েকজন ব্যক্তি ও কিছু প্রতিষ্ঠানের দাবি- বন বিভাগের উদ্ধারের যে তালিকা রয়েছে, এর বাইরে আরও অনেক বেশি বন্যপ্রাণী প্রতিবছর মারা পড়ছে লোকজনের হাতে। স্থানীয়রা ভয়ে বা আতঙ্কে বন বিভাগকে এসব অবহিত করেন না। শিকারিরাও গোপনে তা সাবাড় করছেন। ফলে বন বিভাগের উদ্ধারের তালিকায় নেই এসব প্রাণী ও পাখি। 

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় (সদর দপ্তর-মৌলভীবাজার) কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শুধু জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া বনাঞ্চলের আশপাশ, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪টি অজগর, ২টি গন্ধগোকুল, ২টি বনবিড়াল, ১টি বন্য শূকর, ২টি বানর, ৪টি লক্ষ্মীপেঁচা, ১টি লাউডোগা সাপ, ১টি ঈগল পাখি, ১টি হুতোমপেঁচা, ১টি বনমোরগ, ১টি তিলা ঘুঘু, ১৮টি মুনিয়া পাখি, ১টি ময়না পাখি, ১টি টিয়া পাখি, ১টি কাক জীবিত উদ্ধার করে লাউয়াছড়া বন এবং হাইল হাওর এলাকায় অবমুক্ত করা হয়েছে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে (জানুয়ারি-মার্চ) ১টি মায়া হরিণ, ১টি বুলবুলি পাথি ও ৪৯টি মুনিয়া পাখি মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। 

এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণীপ্রেমী খোকন সিং প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দিন দিন লাউয়াছড়াসহ এ জেলার বনাঞ্চল দখল হয়ে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে গেছে। বন উজাড়ের ফলে ধীরে ধীরে গাছপালা কমতে শুরু করেছে। একইভাবে কমতে শুরু করেছে পশুপাখির খাদ্য। পরিবেশ-প্রতিবেশের প্রভাব, অবাসস্থল, খাদ্য ও পানির সংকট ইত্যাদি কারণে বন্যপ্রাণীরা বন থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে এসে ধরা পড়ছে মানুষের হাতে। এর মধ্যে কিছু প্রাণী মানুষের আঘাতে মারা যাচ্ছে।’

পরিবেশকর্মী সাজু মারচিয়াং বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে বন্যপ্রাণীদের বাঁচাতে হবে। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগেও বনাঞ্চলের ঘনত্ব ছিল। প্রতিটি বনেই ছিল পর্যাপ্ত ফলদ বৃক্ষ। ফলে প্রাণীদের খাবারের সংকট হতো না। এ ছাড়া শুকনো মৌসুমে বনাঞ্চলের অভ্যন্তর ও পাশ দিয়ে প্রবাহিত খাল ও ছড়াগুলোতে পর্যাপ্ত পানি থাকত। এখন শুকনো মৌসুমে বনাঞ্চলে পানির জন্য হাহাকার। এ বিষয়ে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত বছর বিরল প্রজাতির বনবিড়ালসহ বেশ কয়েকটি প্রাণীকে আমরা সড়ক থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করি। সাধারণ মানুষ যখন প্রাণীদের তথ্য আমাদের জানান, তখন আমরা সেগুলো উদ্ধার করে পৌঁছে দিচ্ছি বন বিভাগের হাতে।’

বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি হৃদয় দেবনাথ বলেন, ‘পরিবেশ বিপর্যয়ে নষ্ট হচ্ছে বাস্তুসংস্থান। নগরায়ণ কিংবা বন উজাড়ের ফলে বন্যপ্রাণী হারাচ্ছে আশ্রয়। মানবসৃষ্ট দুর্যোগে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখি বিলুপ্ত হওয়ার পাশাপাশি পাখিরা হারাচ্ছে তার আপন নীড়। এ থেকে উত্তরণ জরুরি। মানবসভ্যতা টিকে থাকতে হলে প্রাণ-প্রকৃতি টিকিয়ে রাখার বিকল্প নেই। প্রাণী রক্ষায় প্রথম প্রয়োজন জনমানুষের সচেতনতা। এ ছাড়া বনাঞ্চল রক্ষা করা না গেলে বন্যপ্রাণী রক্ষা করা যাবে না।’

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বন্যপ্রাণী রক্ষায় মৌলভীবাজার জেলার সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বনে প্রাণীর খাদ্য সংকট দূরীকরণে ফলদ বৃক্ষ রোপণকাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বনগুলোতে বিপুল সংখ্যক ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। প্রাণীদের পানীয়জলের সমস্যা সমাধানেও কাজ করা হচ্ছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা