আব্দুর রহমান মিল্টন, ঝিনাইদহ
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৪৮ পিএম
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৫১ পিএম
খামারে মিলছে না পর্যাপ্ত মুরগির বাচ্চা। প্রবা ফটো
বাচ্চার অভাবে ঝিনাইদহে আড়াই হাজারের বেশি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। হাট-বাজারে পোল্ট্রির অভাবও বেড়ে চলছে। মার্চে এ অবস্থা শুরু হয়। এখন ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ার, কক- কোনো জাতের মুরগিই সুলভ না ব্যবসায়ীদের খাঁচায়।
খামারিদের অভিযোগ, পোল্ট্রি শিল্প জিম্মি হয়ে পড়েছে বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছে। চুক্তিবদ্ধ না হলে কোম্পানিগুলো ছোট খামারিদের বাচ্চা দিচ্ছে না। আবার ফিডের দাম বাড়ছে হুহু করে। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ফিডের দাম তিন হাজার টাকা থেকে বেড়ে এক মাসের ব্যবধানে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সদর উপজেলার দরি-গোবিন্দপুর গ্রামের খামারি নুর ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, তার দুটি শেডের প্রতিটিতে ৯ হাজার ব্রয়লার পালন করা যায়। বাচ্চা না পাওয়ায় দুই মাস ধরে একটি এবং অপরটি তিন সপ্তাহ ধরে খালি রয়েছে। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর কাছে বাচ্চা পাওয়া গেলেও তার দাম দ্বিগুণ হওয়ায় লোকসানের ভয়ে নিতে পারছেন না।
সৌদিতে প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে উদ্যোক্তা হওয়ার আশায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন শৈলকুপা উপজেলার হাবিবপুর গ্রামের সোহেল রানা। তার চারটি আধুনিক শেডে প্রায় ১২ হাজার বাচ্চা পালন করা যায়।
সোহেল বলেন, ‘দুই মাসের বেশি সময় খাঁখাঁ করছে অত্যাধুনিক শেডগুলো। চুক্তি না করলে তারা সাধারণ খামারিদের কাছে বিক্রি করছে না এক দিনের বাচ্চা। যে বাচ্চার দাম ২০-৩০ টাকা ছিল তা এখন বেড়ে ৬০-৭০ টাকা হয়েছে। তবু বাচ্চা মিলছে না।’ এক সময়কার স্বল্প পুঁজির এসব ব্যবসা এখন শিল্পপতি-কোটিপতির হাতে চলে গেছে জানিয়ে ক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয় উদ্যোক্তা ও বেকার তরুণ-যুবারা।
পোল্ট্রি বাচ্চা উৎপাদনকারী স্থানীয় ইউনিভার্সেল পোল্ট্রির মালিক এম এ কাদের এ বিষয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, মা মুরগির প্রধান খাবার সয়াবিন কেক ও ভুট্টা। এখানে আগে যে খাবারের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৭৮ টাকা। ভুট্টা আগে ছিল ২০ টাকা, বর্তমানে ৩৬ টাকা প্রতি কেজি। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও ওষুধের মূল্য বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় বাচ্চার দাম না পাওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে প্রতি সপ্তায় কমবেশি ১ লাখ ২০ হাজারটি পর্যন্ত বাচ্চা উৎপাদন করা হতো। বর্তমানে ব্রয়লার ও সোনালি মিলে সপ্তাহে ৩০ থেকে ৫০ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে।
এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের মা মুরগি বেচে ফেলেছে বলে জানান পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খোন্দকার মো. মহসিন। মা মুরগি বেচে ফেলায় বাচ্চা উৎপাদন কমে গেছে। মা মুরগি বেচে ফেলায় সংকট গভীর হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিদেশ থেকে আমদানি করা পোল্ট্রি খাবারের দাম বেড়েছে। সরবরাহ অনিশ্চিত হয়েছে। তা ছাড়া স্থানীয় হ্যাচারির সংখ্যা কম হওয়ায় সংকট বাড়ছে। সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনোজিৎ কুমার বলেন, রেডি ফিডের বিপরীতে বিকল্প পদ্ধতিতে খাবার তৈরি করতে হবে; স্থানীয় হ্যাচারির
সংখ্যা বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, পোল্ট্রি ফিডের দাম বৃদ্ধি, হ্যাচারিতে বাচ্চা পর্যাপ্ত না পাওয়া এবং মুরগির দাম বৃদ্ধি বিষয়ে জরুরি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জেলার বাজারগুলোতে তিনটা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। ডিলার, ব্যবসায়ী আর খুচরা বাজারে তদারকি চলছে। এতে করে দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ঝিনাইদহে ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ারসহ মোট ৪ হাজার ৯৭৪টি খামার রয়েছে। এরমধ্যে আড়াইহাজারেরও বেশি বন্ধ হয়ে গেছে। ১৭ লাখ ৭১ হাজার জনসংখ্যার এ জেলায় প্রতিবছর গরু-খাসি, মুরগিসহ মোট মাংসের চাহিদা ১ লাখ ২৯ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টন। এরমধ্যে মুরগির মাংসের চাহিদা বছরে ৬৬ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন। স্বাভাবিক সময় প্রতি মাসে জেলায় ১৮০ কোটি টাকার মুরগির মাংস কেনাবেচা হয়।