প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৫৭ এএম
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ১১:৫১ এএম
টানা দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। গরমের তীব্রতায় মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিদেরও হাঁসফাঁস অবস্থা। একটু স্বস্তির আশায় চৌবাচ্চার পানিতে আশ্রয় নিয়েছে চিড়িয়াখানার বাঘ। প্রবা ফটো
চলতি মাসের শুরু থেকেই বাড়ছে উত্তাপ। গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশ। গরমের তীব্রতা বাড়ছে প্রতিদিন। বিপর্যস্ত জনজীবন। সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। রমজান মাসে তাপমাত্রার এমন রুদ্ররূপে দুর্বিষহ অবস্থা রোজাদারদের। হাসপাতালে রোগীর ভিড় বাড়ছে, বিশেষ করে গরমকালীন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বিঘ্নিত হচ্ছে কৃষি কার্যক্রম। রোদের প্রখরতায় মাঠে টিকতে পারছেন না কৃষকরা। ফসল বাঁচাতে সেচ দিতে হচ্ছে প্রতিদিন। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশে টানা এক সপ্তাহ তাপমাত্রা বৃদ্ধির এমন ঘটনা অস্বাভাবিক।
সবাই এখন মুখিয়ে আছে বৃষ্টির অপেক্ষায়। তবে এ বিষয়ে আপাতত স্বস্তিদায়ক কোনো পূর্বাভাস দিচ্ছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটির পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, গত ৪ এপ্রিল থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হয় কয়েকটি জেলায়। পরে এটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। আপাতত রংপুর বাদে দেশের বাকি সাত বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপমাত্রা আরও বাড়বে ৪০ বা ৪২ ডিগ্রি হয়ে যেতে পারে। আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দাবদাহ চলমান থাকবে। ১৯ তারিখের পর ময়মনসিংহ বিভাগে ও ২২ তারিখের পর ঢাকা, খুলনাসহ অন্যান্য বিভাগে সামান্য বৃষ্টি বা কালবৈশাখী হতে পারে।
আজিজুর রহমান আরও জানান, এখন সূর্যতাপ খাড়াখাড়িভাবে পড়ার কারণে উত্তাপ বেশি। তবে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় মানুষের শরীর কম ঘামছে। কম ক্লান্ত হচ্ছে। এ অবস্থা আরও কয়েক দিন চলবে। এখন প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ।
এদিকে আগামী ১০ দিনের পূর্বাভাস জানিয়ে ‘ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট (ইপিএমডব্লিউএফ)’ বলছে, আজ শুক্রবার থেকে আগামী সাত থেকে আট দিন বাংলাদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে সপ্তাহের শেষদিকে সিলেট অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তবে পরের সপ্তাহের শনিবার থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
১০ দিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) চলতি বছর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এরপরই ছিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি। এ ছাড়া রাজধানীতে ৩৯ দশমিক ৫ ও চট্টগ্রামে ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. জাহিদুর রহমান বলেন, গতকাল সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৩ শতাংশ। দুপুর ১২টায় ছিল ৩৯ ডিগ্রি এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৫ শতাংশ। গত ১০ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামীতে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। দুয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এতে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
সতর্ক থাকতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা
তীব্র গরমের স্বাস্থ্যগত প্রভাব নিয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর সঙ্গে। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, গরমে সর্দি, কাশি, জ্বর, টনসিল, শ্বাসজনিত রোগবালাই বেড়ে যাচ্ছে। অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, টাইফয়েড, ব্রন টাইফয়েড, জন্ডিস বাড়ছে। বেশি বাড়ছে ডায়রিয়াজনিত রোগ। রমজানের দিন মানুষের শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যাচ্ছে। দুর্বল লাগে, মাথা ঘোরায়, ক্লান্তি লাগে, বিশেষ করে যারা রোজা রাখেন তাদের কষ্টটা আরও বেশি হচ্ছে।
এ বিষয়ে বুয়েটের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে দেশে গড় আর্দ্রতা বেশি থাকছে। এতে শরীরে ঘাম বেশি হয় এবং তা শুকাবে না। ফলে রমজানের এই সময়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
এ অবস্থা থেকে প্রতিকারের উপায় জানতে চাইলে ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, রোজাদাররা ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করতে পারেন। সাধারণ পানি পান না করে বরং পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে পান করতে হবে। তবে রাস্তাঘাটের শরবত, গ্লুকোজ, গুড়ের শরবত ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করা হয় না। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। মাথায় ছাতা ব্যবহার করতে হবে। রাস্তা বা রোদে বসে যাদের কাজ করতে হয়, তারা এক-দুই ঘণ্টা পরপর ছায়াযুক্ত স্থানে গিয়ে বিশ্রাম করবেন। এভাবে পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।
তবে প্রয়োজন না থাকলে এই গরমে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, নেহাত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাঘুরি না করাই ভালো।
গরমের তীব্রতা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, দাবদাহের কারণে বয়স্কদের হিটস্ট্রোকের শঙ্কা বেশি। তাই সরাসরি রোদ থেকে নিজেকে আড়াল কেরে রাখতে হবে। রিকশাচালক ও শ্রমিকরা টানা পরিশ্রম না করে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে কাজ করতে পারেন। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বাইরে কাজ করার সময় মাথা ঢেকে রাখতে হবে। সম্ভব হলে কিছুক্ষণ পরপর শরীর মুছতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে কম বের হওয়া উচিত। আর রোজাদাররা ইফতারের পর ঘন ঘন পানি পান করতে পারেন।