এস এম রানা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:১৯ পিএম
হালদা নদী। ফাইল ফটো
ঝড়বৃষ্টি হলে, আকাশ গুড়ুম গুড়ুম ডাকলে চিত্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে মাছদের। তখন তারা ডিম পাড়তে শুরু করে। কিন্তু বৃষ্টিহীন প্রকৃতি ও দাবদাহের কারণে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ছে না। এই প্রজনন মৌসুমে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ প্রজাতির মা মাছ ডিম ছাড়ে হালদায়।
ডিঙি নৌকায় ভর করে বজ্রমাথায় সেই ডিম নানা কায়দায় জালে তুলে নেন জেলেরা। পরে সেই ডিম থেকেই মাছের পোনা উৎপাদন করে অর্থকড়ি অর্জন করেন তারা।
এবার বৈশাখে জেলেদের ভাগ্যে জোটেনি মাছের ডিম। কারণ, মা মাছ ডিম ছাড়ার মতো অনুকূল পরিবেশ পায়নি। ডিম ছাড়ার পরিবেশ অনুকূলে নয়, চরম প্রতিকূলে গেছে মা মাছের। ফলে জেলেরা তীর্থের কাকের মতো ডিমের অপেক্ষায় থাকলেও আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না। বজ্রবৃষ্টিও নেই। ফলে এই যাত্রায় ডিম সংগ্রহ নিষ্ফল হলো।
অথচ সোমবার রাতেই দেশের সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলেও বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। মানবকুল যখন স্বস্তির বৃষ্টির জন্য অধীর অপেক্ষা করছিল, তখন হালদা নদীর মা মাছেরা অপেক্ষায় ছিল ডিম ছাড়ার। মধ্যরাতে আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা গিয়েছিল। হালকা শীতল বাতাসও বয়ে যায় চট্টগ্রামজুড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি আর হয়নি।
হালদা পাড়ের জেলেদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মা মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম চলছে। কিন্তু বজ্রবৃষ্টি না হওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ে মা মাছ ডিম দেয়নি। আকাশে মেঘের ঘনঘটা না থাকায় জেলেরাও সোমবার রাতে হালদা পাড়ে যাননি। তবে তারা সজাগ ছিলেন। বৃষ্টি শুরুর লক্ষণ দেখলেই যেন দৌড়ে পৌঁছতে পারেন নদীতে।
হালদা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মতো অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়নি। ডিম ছাড়ার ক্ষেত্রে নদীতে এখন প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। সাধারণত কার্পজাতীয় মাছের তাপমাত্র ২২-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ধরা হয়। ক্ষেত্রবিশেষের ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। কিন্তু এখন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। বজ্রসহ বৃষ্টিও নেই।
এ বিষয়ে হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, মেজর কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন আচরণ পানির তাপমাত্রার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। উচ্চ তাপমাত্রার নেতিবাচক প্রভাব। যেমন- প্রজনন চক্র, সময় বিলম্ব, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, ডিম্বাণুর পূর্ণতা প্রাপ্তিতে বিলম্ব, হরমোনের ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া।
আবার উচ্চ তাপমাত্রা নদীর বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য শৃঙ্খলকেও প্রভাবিত করতে পারে। এমতাবস্থায় অনুকূল পরিবেশ না পেলে মা মাছ ডিম দেবে না। যেমন- ১৮ এপ্রিল (গতকাল) থেকে অমাবস্যার জো শুরু হয়েছে। পরিবেশ অনুকূল থাকলে এদিন থেকেই মা মাছ ডিম ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে মা মাছ ডিম ছাড়ছে না।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতোমধ্যে আশার বাণী শুনিয়েছে। তামপাত্রা তিন-চার দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। সেই হিসাবে পরবর্তী পূর্ণিমা জো-এ (২-৭ মে পর্যন্ত সময়ে) মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে।