× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বরিশাল সিটি নির্বাচন

খোকনের পিছে জুটছে সাদিকবিরোধীরা

মঈনুল ইসলাম সবুজ, বরিশাল

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ২২:০৮ পিএম

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৪১ পিএম

খোকনের পিছে জুটছে সাদিকবিরোধীরা

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর তাকে ঘিরে স্থানীয় রাজনীতিতে হারানো অবস্থান ফিরে পেতে তৎপরতা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলের সাদিক আবদুল্লাহবিরোধী অংশের নেতাকর্মীরা। তাদের তোড়জোড় দেখে মনে হচ্ছে, বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ পরিবারের একচ্ছত্র আধিপত্য বুঝি হুমকির মুখে! কিন্তু সাদিকবিরোধীদের অতি উৎসাহের কারণে সিটি নির্বাচন ঘিরে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব-বিভেদ আরও বাড়তে পারে। জাতীয় নির্বাচনের আগে দলে কোন্দল বাড়লে তা মোটেও সুখকর পরিণতি বয়ে আনবে না বলে শঙ্কায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।


এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বরিশালে আসছেন খোকন সেরনিয়াবাত। মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রথমবার এলাকায় আসছেন তিনি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, খোকনের সঙ্গে আজ জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার বরিশালে আসার কথা রয়েছে।

এদিকে খোকনকে বরণ করে নিতে বরিশালে চলছে বর্ণাঢ্য আয়োজন। দলের মনোনয়ন পাওয়ায় তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে নগরজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে অর্ধশতাধিক তোরণ। ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোকনকে বরণে  এসব তৎপরতার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের মধ্যে প্রকাশ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র সাদিকের বিরোধী অংশের নেতাকর্মীরা। আড়াল থেকে এসব কাজে ইন্ধন দিচ্ছেন বরিশালের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের অনুসারীরা। এই দুই অংশের নেতাকর্মীরা খোকনকে নিয়ে বরিশালে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

অথচ দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে এমন আয়োজনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। বুধবার বিকালে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুনেছি খোকন সেরনিয়াবাত বৃহস্পতিবার বরিশালে আসবেন। তবে এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনিও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাই এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।’


তিনি আরও জানান, সিটি নির্বাচন সামনে রেখে মঙ্গলবার বিকালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের তিনটি সভা হয়েছে। ঢাকা থেকে সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। ঈদের পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসনাত আবদুল্লাহ বরিশালে আসবেন। এরপর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করে সিদ্ধান্ত হবে কীভাবে সিটি নির্বাচন পরিচালনা করা হবে।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে খোকন আবদুল্লাহ। তার বড়ভাই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে বরিশালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা। পারিবারিক সেই প্রভাব-বলয় টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় সক্রিয় হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে সাদিক সেরনিয়াবাত আবদুল্লাহ। তিনি একাধারে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটির বর্তমান মেয়র। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বরিশাল সিটিতে মেয়র নির্বাচিত হন সাদিক। তার দোর্দণ্ড প্রভাবে বরিশালে হাসনাত পরিবারের বিরোধী-বলয়ে যুক্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোণঠাসা বহু দিন ধরেই। হাসনাত আবদুল্লাহর আপন ছোট ভাই হয়েও বরিশালের রাজনীতিতে খোকন সেরনিয়াবাত কখনোই সুবিধা করতে পারেননি। এর আগে বিভিন্ন সময় জাতীয় ও সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি।

আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠেয় বরিশাল সিটির ভোটে এবারও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাদিক। মনোনয়ন দেওয়ার জন্য সাদিককে একক প্রার্থী ঘোষণা করে কেন্দ্রে প্রস্তাবও পাঠিয়েছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সেই প্রস্তাব বাতিল করে খোকনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ওই সভায় উপস্থিত থেকে সাদিকের বাবা হাসনাত আবদুল্লাহ ছেলের মনোনয়ন বহাল রাখতে নানা চেষ্টা করেও হালে পানি পাননি। 

এ নিয়ে সাদিকের অনুসারীরা হতাশ হলেও উজ্জীবিত বিরোধী-বলয়ের নেতাকর্মীরা। কিন্তু খোকনকে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই বারবার ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে দলীয় ঐক্য বহাল রাখার প্রশ্নটি।

খোকন সেরনিয়াবাতের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলীয় মনোনয়ন ঘিরে পারিবারিক যে শিথিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছেন খোকন নিজেই। বুধবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবনে গিয়ে তিনি বড় ভাই হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করেছেন। তার কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং বরিশাল আসার বিষয়ে তাকে অবগত করেছেন খোকন।

এ সময় সাদিক আবদুল্লাহও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে সাদিককে একাধিকবার ফোন কল ও এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। তবে মঙ্গলবার মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এ নিয়ে (মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে) মনোক্ষুণ্ণ হওয়া যাবে না। যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন, তিনি আমার চাচা। নৌকাকে বিজয়ী করাতে হবে।


এর আগে মনোনয়ন পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই।’


জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, মনোনয়নপ্রাপ্ত ও বঞ্চিত দুজনেই ঐক্যের কথা বলছেন। কিন্তু একটি পক্ষ সাদিকের ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে জেলা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে শোডাউনের যে প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন, তাতে সুফল তো মিলবেই না, বরং বিভেদ আরও বাড়বে। নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে।


খোকনকে বরণ করে নিতে যে আয়োজন করা হয়েছে; তার অন্যতম উদ্যোক্তা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম। প্রয়াত মেয়র হিরণের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এই নেতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, খোকন সেরনিয়াবাতের বরিশাল আগমনের খবরটি তাকে ব্যক্তিগতভাবে জানানো হয়েছে। দলকে জানানো হয়েছে কি না, তা জানা নেই। তবে মঙ্গলবারের সভায় নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে। তাই এ নিয়ে বিভেদের শঙ্কা নেই বলেও দাবি আফজালুলের।

এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনূস।


খোকনের অনুসারীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে সড়কপথে বরিশাল নগরীর গোরিয়ার পাড়ে পৌঁছানোর কথা খোকনের। সেখানে তাকে বরণ করে নেওয়া হবে সাদিকবিরোধী নেতাকর্মীদের উদ্যোগে। সেখান থেকে শোডাউন করে কাশিপুর বাজার, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল, বৈদ্যপাড়ার মুখে, বিএম কলেজের প্রথম গেটে, নতুন বাজার, ল কলেজের সামনে, জেলখানার মোড়, অশ্বিনী কুমার হল, গীর্জা মহল্লার মোড় হয়ে খোকন যাবেন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা