সিলেট অফিস
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:২০ পিএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:২৩ পিএম
হত্যার শিকার আলে ইমরান ও তার স্ত্রী খোশনাহার। সংগৃহীত ছবি
সিলেটে ঘুরতে গিয়ে নিহত আলে ইমরানের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনের দাবি করেছে পুলিশ। হত্যার শিকার হওয়ার তিন দিনের মধ্যে এই হত্যার কারণ জানাল পুলিশ।
হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরা ঘুরিয়ে রাখার সূত্র ধরে এই হত্যার রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আলে ইমরানের স্ত্রী ও তার প্রেমিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আলে মামুন হত্যা রহস্য উন্মোচনের কথা জানান।
গত সোমবার বিকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং বল্লাঘাট রিভারভিউ রিসোর্টের পাশে অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধারের পর জানতে পারেন নিহতের নাম আলে ইমরান। বয়স ৩২ বছর।
আলে ইমরানের বাড়ি কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার গুরই গ্রামে। বাবার নাম আব্দুল জব্বার।
ঘটনার পর থেকে ‘নিখোঁজ’ ছিলেন নিহত ইমরানের স্ত্রী খোশনাহার। তার বয়স ২১ বছর।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মামুন জানান, মরদেহ উদ্ধারের পরদিন গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করতে ও গ্রেপ্তারে তৎপরতা শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে গত বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে গোয়াইনঘাট থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পৃথক অভিযানে খোশনাহার, তার প্রেমিক মাহিদুল হাসান মাহিন, মাহিনের সহযোগী নাদিম আহমেদ নাঈম ও রাকিবকে গ্রেপ্তার করে।
কিশোরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
খোশনাহারসহ আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান এসপি মামুন।
তিনি বলেন, ’প্রায় আড়াই বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত মাহিনের সঙ্গে খোশনাহারের পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যদিও বছর পাঁচেক আগে নিহত ইমরানের সঙ্গে খোশনাহারের বিয়ে হয়। বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানোর পর খোশনাহার ও মাহিন বিভিন্ন সময়ে ইমরানকে খুন করার চেষ্টা করে আসছিলেন। সবশেষ তারা ১৫ এপ্রিল রাতে স্বামী ইমরানকে নিয়ে বেড়ানোর কথা বলে ভৈরব থেকে ট্রেনে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। অন্যদিকে প্রেমিক মাহিন তার অফিসে কর্মরত নাদিম ও রাকিবকে নিয়ে ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেনে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন।
১৬ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে বল্লাঘাটের রিভারভিউ রিসোর্ট অ্যান্ড আবাসিক হোটেলের ১০১ নম্বর কক্ষে ওঠেন ইমরান ও খোশনাহার। অন্যদিকে মাহিনসহ অপর তিনজন ওঠেন বল্লাঘাটের হোটেল শাহ আমিনে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে এসপি মামুন বলেন, ’পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে খোশনাহার কৌশলে তাদের কক্ষের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন। পরে মাথাব্যথার ওষুধের কথা বলে রাত ১০টার দিকে ইমরানকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন খোশনাহার। কিছুক্ষণ পর ইমরান ঘুমিয়ে পড়লে খোশনাহার রাত ১২টার দিকে প্রেমিক মাহিন ও সহযোগীদের নিজেদের হোটেল কক্ষে নিয়ে আসেন। রাত ২টার দিকে ইমরানের গলায় গামছা প্যাঁচিয়ে খোশনাহার ও মাহিন হত্যা করেন।
এ সময় রাকিব রুমের বাইরে অবস্থান নেন এবং নাদিম নিহত ইমরানের পা চেপে ধরেন। রাত ৩টার দিকে হত্যাকারী সবাই ইমরানের মরদেহ হোটেলের পাশে পাথরচাপা দিয়ে রাখেন। পরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে তারা সবাই হোটেল থেকে বের হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সিলেট হয়ে পালিয়ে যান বলে জানান এসপি।
পরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।