ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৩ ১২:০৮ পিএম
ঈশ্বরদীর রূপপুর থেকে চরকুড়লিয়া পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি হলে এসব খানাখন্দে পানি জমে জলাশয়ে পরিণত হয়। প্রবা ফটো
ঈশ্বরদীসহ বৃহত্তর পাবনা জেলাকে বন্যা থেকে রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঈশ্বরদীর রূপপুর থেকে বেড়া উপজেলার কাজিরহাট পর্যন্ত ১৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বাঁধ ১৯৭২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন তিনি। পরবর্তীতে বাঁধের নামকরণ করা হয় ‘মুজিব বাঁধ’।
এ বাঁধের ১৭ কিলোমিটার পড়েছে ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী লক্ষ্মীকুণ্ডা ও পাকশী ইউনিয়নে। পরবর্তীতে মুজিব বাঁধের ওপর দিয়ে মানুষের চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয় পাকা সড়ক। ঈশ্বরদীর চরকুড়ুলিয়া থেকে রূপপুর পর্যন্ত সে সড়কটি এখন বেহাল। একসময় এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক হিসেবে পরিচিত ছিল মুজিব বাঁধ। এখন তা মারণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে মাঝেমধ্যেই যানবাহন উল্টে যায়। সড়কের গর্তে আটকে থাকে গাড়ির চাকা। বৃষ্টি হলে খানাখন্দে পানি জমে জলাশয়ে পরিণত হয়।
পাবনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মুজিব বাঁধের ওপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় নব্বইয়ের দশকে এক লেনবিশিষ্ট পাকা সড়ক নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০১৪ সালে সওজের তত্ত্বাবধানে ১৮ ফুট প্রশস্ত করে দুই লেনবিশিষ্ট সড়কে রূপান্তর করা হয়। এ সড়ক প্রথমে পানি উন্নয়ন বোর্ড, এরপর এলজিইডি ও বর্তমানে সওজের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ২০১৯ সালের পর থেকে এ সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ১০ গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েক কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুজিব বাঁধের ওপর নির্মিত এ সড়কে ঈশ্বরদীসহ পাবনা সদর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করে। ঈশ্বরদীর রূপপুর থেকে চরকুড়ুলিয়া পর্যন্ত এ সড়কের দুই পাশের ১০ গ্রামের যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
পাকুড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান সামিয়া বলেন, ‘এ সড়কের পাশেই আমাদের স্কুল। সড়কের এমন অবস্থা হয়েছে যে, যানবাহন চলাচল করতেই পারে না। বৃষ্টি হলে কাদা-পানিতে হেঁটেও যাতায়াত করা যায় না। অনেক সময় স্কুলে যাওয়ার পথে সড়কের কাদা-পানিতে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়। সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারে দাবি জানাচ্ছি।’
লক্ষ্মীকুণ্ডা এমপির মোড়ের ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘ড্রাম ট্রাক ও ১০ চাকার বালু ও ইটবাহী ট্রাক চলাচলের ফলে দ্রুত সড়কটি নষ্ট হয়ে গেছে। সড়কে যত বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে; তাতে অটোবাইক, সিএনজি, রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারে না। শুধু ড্রাম ট্রাক ও ১০ চাকার ট্রাক চলাচল করছে। মাঝেমধ্যে এসব ট্রাকও উল্টে যায়, গর্তে আটকে থাকে।’
লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম বলেন, মুজিব বাঁধের সড়কের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের কোনো অবস্থা নেই। পিচঢালা এ সড়কের আর কোথাও পিচ নেই। সড়কজুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়ক সংস্কারের মতো অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের নেই। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সড়কটি সংস্কারের জন্য যোগাযোগ করেছি। কেউ সাড়া দেয়নি। কেউ এ সড়ক নির্মাণে সহযোগিতা করতে চায় না। দায়িত্ব নিতে চায় না।
পাবনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, এটিসহ বেশ কয়েকটি সড়ক সংস্কারে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে সংস্কার করা হবে।