× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চট্টগ্রামে বাড়ছে ডায়রিয়া নেপথ্যে তিন কারণ

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩ ১৪:০৮ পিএম

ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা। ফটো সংগৃতীত

ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা। ফটো সংগৃতীত

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার গৃহবধূ কহিনূর আক্তার। গত সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। এর দুদিন পর তার শিশুকন্যাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।

প্রতিদিনের বাংলাদেশকে কহিনূর জানান, নলকূপের পানি ব্যবহার করেন তারা। তবে সম্প্রতি নলকূপে পানি কম পাওয়া যাচ্ছে। এক বালতি পানি ভরাতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। এই কারণে মাঝে-মধ্যে পুকুরের পানি ব্যবহার করেন তারা।

ওই এলাকায় সুপেয় পানির সংকটের কথা বললেন বোয়ালখালী উপজেলার উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সঞ্জয় সেনও। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘পশ্চিম গোমদন্ডীতে পানির স্তর অনেকটা নিচে নেমে গেছে। তা ছাড়া ওই এলাকার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণও বেশি। মানুষ বাধ্য হয়ে খোলা উৎসের পানি ব্যবহার করছে। এ কারণে ওই এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি।’

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন করে ডায়রিয়া রোগী আসছে। আক্রান্তদের প্রায় সবাই খাল ও পুকুরের পানি ব্যবহার করে। এই বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছি আমরা।’

শুধু বোয়ালখালী বা পুটিয়া নয়, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত বাড়ছে। গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এপ্রিলে প্রতি সপ্তাহে গড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৪ জন। আগের মাসের প্রথম সপ্তাহে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮২৪ জন। এক মাসে বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ।

এর কারণ অনুসন্ধানে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি দল রবিবার চট্টগ্রামে এসেছে। এ ছাড়া জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রথম দিন চট্টগ্রামের তিন উপজেলা ঘুরে ডায়রিয়া বাড়ার পেছনে তিনটি কারণের কথা জানিয়েছে কমিটির সদস্যরা।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ১ মে ২২৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। ৩ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত সাত দিনে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ২৬৪, ২৩২, ২৬৩, ২৬৪, ২৮১ ও ২২৯ জন। এই সাত দিনে মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৮২৪ জন। যেখানে মার্চের পুরো মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭৫৭। এপ্রিলে তা বেড়ে ৫ হাজার ৬৯৫ হয়। উপজেলা পর্যায়ে আক্রান্ত বেশি পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশে। এসব উপজেলায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিআইটিআইডিএ, জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালসহ নগরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগী আগের চেয়ে বেড়েছে। নগরের এসব হাসপাতালে কত রোগী ভর্তি হচ্ছেন, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) পরিচালক ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘হাসপাতালে গড়ে ৬০-৭০ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে প্রতিদিন। আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষায় কলেরার জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। আগে আমাদের হাসপাতালে প্রতি মাসে ডায়রিয়া রোগীদের নমুনা পরীক্ষায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশে কলেরার জীবাণু পাওয়া যেত। এখন তা অনেক বেড়ে গেছে। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগীর কলেরার জীবাণু শনাক্ত হচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক। এর কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআরের একটা প্রতিনিধিদল এসেছে। তারা ঢাকায় গিয়ে একটা রিপোর্ট দেবেন।’

চট্টগ্রাম নগর এবং জেলায় ডায়রিয়া রোগী হঠাৎ বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত আইইডিসিআর প্রতিনিধিদলের প্রধান ডা. মো. জাহিদুর রহমান। তার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের ওই দলটি গতকাল সোমবার বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা উপজেলা পরিদর্শন করে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীও তিন দিন আগে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াজেদ চৌধুরীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তারাও আইইডিসিআরের ওই দলটির সঙ্গে রয়েছেন।

ডা. মো. ওয়াজেদ চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আক্রান্ত এলাকাগুলো কর্ণফুলী নদীর আশপাশে। আমরা মূলত তিনটি কারণ দেখছি। একটা হচ্ছে দূষিত পানি, খাদ্যাভ্যাস আর অতিরিক্ত গরম। বোয়ালখালীর আক্রান্তদের বেশিরভাগ উপকূলীয় এলাকার। নদী ও পুকুর খালের পানি ব্যবহার করে। এখন সেসব উৎসে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় একটা সমস্যা হচ্ছে। রমজানে খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে গেছে। তবে আশার ব্যাপার হলো আক্রান্তরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে মানুষকে আমরা পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। আর বাইরের খাবার বিশেষ করে স্ট্রিটফুড খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা