× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাঁধ নির্মাণে মন্থরগতি কুড়িগ্রামে বর্ষার আগেই ভাঙন আতঙ্ক

গোলাম মওলা সিরাজ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৩ ১১:৫২ এএম

আপডেট : ১২ মে ২০২৩ ১১:৫৭ এএম

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চরবড়াইবাড়ী এলাকার ধরলার বাম তীররক্ষা কাজ চলছে। প্রবা ফটো

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চরবড়াইবাড়ী এলাকার ধরলার বাম তীররক্ষা কাজ চলছে। প্রবা ফটো

অর্থসংকটে পড়েছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে নদ-নদীর তীর প্রতিরক্ষা ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে একদিকে নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে বরাদ্দ কম পাওয়ায় কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। এতে নদ-নদীর তীরের মানুষ ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।

কুড়িগ্রাম পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলার বড় তিনটি নদ-নদীতে ভাঙন এবং বন্যারোধে তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ চারটি প্রকল্পে ৫৭ কিলোমিটার এলাকায় কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর গড়ে ৫৫ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকাদারদের গড়ে ৩০ শতাংশ অর্থ দিতে পেরেছে তারা।

এদিকে বর্ষা শুরুর আগে জেলার নদ-নদীগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বড় চারটি নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারের আশপাশে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গত দুই সপ্তাহে কিছু বাড়িঘর নদীতে ডুবে গেছে। বর্ষা শুরুর আগেই নদ-নদীর ভাঙনের মাত্রা বিগত বছরগুলোকে ছেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় ভাঙনরোধে জরুরি কাজ করার ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া গেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে না।

পাউবোর তথ্যে, ২ হাজার ২১৬ কোটি টাকার প্রকল্পগুলোতে গত বছরের জুন পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র ৬৩৬ কোটি টাকা। যা মোট টাকার ২৯ ভাগ। বাকি টাকার মধ্যে চলতি বছরে প্রথম অবস্থায় বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র ১৯০ কোটি টাকা। যা মোট টাকার সাড়ে ৮ শতাংশ। পরে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশোধিত বরাদ্দ আবেদন করলে গত এপ্রিলে প্রাথমিক বরাদ্দসহ সংশোধিত বরাদ্দ দেয় ৩৩০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি বছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনার ১৫ শতাংশ টাকা পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলমান প্রকল্প চারটির গড়ে ৫৫ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে গত এপ্রিল পর্যন্ত। বিপরীতে গড়ে ৩০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে ঠিকাদারদের। আরও অর্থ চেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ পাঠানোর কথা বলছে পাউবো। বরাদ্দ পাওয়ার আশাও করছে তারা। যদিও দুধকুমার ছাড়া বাকি তিনটি প্রকল্প চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি প্রকল্পও এ বছরে শেষ হচ্ছে না।

জেলার রৌমারী-রাজীবপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীরে ২৫টি আলাদা প্যাকেজে সাড়ে ৮ কিলোমিটার তীররক্ষার কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পের ব্যয়ের বিপরীতে গত এপ্রিল পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১১০ কোটি টাকা। চলমান চারটি প্রকল্পের মধ্যে ওই প্রকল্পের কাজ বেশি করা সম্ভব হয়েছে। গত এপ্রিলে ৮০ ভাগ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি।

চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম কাজ হয়েছে দুধকুমার নদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের। এ প্রকল্পে নদের তীর ২৫ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার এলাকায় তীররক্ষার কাজসহ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং দর্শনীয় স্থান করা হবে। যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯২ কোটি টাকা। গত এপ্রিলে এ প্রকল্পের ১১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় পাউবো। প্রকল্পের ৬৯২ কোটি টাকার বিপরীতে এখন পর্যন্ত সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ৫০ কোটি টাকা।

চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রের ডান তীরে ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার এলাকায় ২৪টি আলাদা প্যাকেজে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও তীর প্রতিরক্ষার কাজ চলমান। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৮ কোটি টাকা। প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও এ পর্যন্ত বরাদ্দ ছাড় দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬০ কোটি টাকা। 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চরবড়াইবাড়ী এলাকায় ধরলার বাম তীররক্ষা প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাজওয়ার ট্রেড সিস্টেম লিমিটেডের প্রতিনিধি কাজী মহব্বত হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ অর্থ পেয়েছি। এমনিতে জিনিসপত্রের দাম বেশি। তার ওপর বরাদ্দ কম। খুব কষ্টে কাজ চলমান রাখা হয়েছে।’

রৌমারী-রাজীবপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের বাম তীররক্ষা ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রোপ্রার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (পিডিএল)-এর ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের প্রতিটা সেক্টরে অর্থসংকট চলছে। মেনে নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের কাজ শেষের দিকে।’

এদিকে হালকা বৃষ্টিতে নদ-নদীগুলোর পানি কিছুটা বাড়তেই ভাঙন দেখা দিয়েছে কয়েকটি এলাকায়। পাউবো বলছে, ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও শঙ্কোষ নদীর অন্তত আটটি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। গেল তিন সপ্তাহে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবাদি জমি, গাছপালা ও সড়ক গেছে নদীর পেটে। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ শত শত বাড়ি। 

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চলমান প্রকল্পগুলোর ৩০ ভাগ অর্থ ঠিকাদারদের প্রদান করা হয়েছে। চলতি বছরে আরও ১৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও প্রয়োজনীয় অর্থ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজের গতি বাড়বে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা