× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ধর্ষণের মামলা না নিয়ে থানায় মীমাংসার চেষ্টা, অপবাদ

পটুয়াখালী প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩ ২৩:৪০ পিএম

আপডেট : ১৬ মে ২০২৩ ১১:০১ এএম

পটুয়াখালী সদর থানা। ফাইল ছবি

পটুয়াখালী সদর থানা। ফাইল ছবি

পটুয়াখালী সদর থানায় হাজির হয়ে এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তাকে কোনো সহযোগিতা করেনি। ঘটনার পরপরই ভিক্ষুক মায়ের সঙ্গে থানায় যাওয়া পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রীর কথা আমলে নেননি সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান। মামলাও নেননি। ১৩ ঘণ্টা থানায় বসিয়ে মা-মেয়েকে শাসিয়েছেন তিনি। শেষে মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াই ঘটনাটিকে মিথ্যা ও সাজানো বলে অভিহিত করেছেন।

ওই ছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, টাকা নিয়ে ঘটনাটি গোপন করার জন্য চাপ দিয়েছেন ওসি। গত বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও প্রশাসন) এবং সদর সার্কেল অফিসার সাজেদুর ইসলাম বলেন, বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই শিশুর বাবা অসুস্থ, শয্যাশয়ী। মূলত তার মা ভিক্ষা করে সংসার ও মেয়ের লেখাপড়া চালান। তারা রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করেন।

ওই ছাত্রীর মা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে ৮টার দিকে তার শিশু কন্যা (ভিকটিম) আম কুড়াতে প্রতিবেশী জবেদ সিকদারের বাগানে যায়। বাগান থেকে কয়েকটি আম সংগ্রহ করে। ফলগুলো নিলে জবেদ সিকদার ভিকটিমকে ব্যাগ দেওয়ার কথা বলে ঘরে ডেকে নেন। ব্যাগ পাওয়ার আশায় ওই মেয়ে ঘরে ঢুকলে জবেদ দরজা বন্ধ করে তাকে ধর্ষণ করেন। তা দেখে জবেদের স্ত্রী সালেহা বেগম ওই মেয়েকে মারধর করেন। সেখান থেকে কোনোমতে পালিয়ে বাড়ি এসে মাকে বিষয়টি জানায়।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে মেয়েকে নিয়ে সদর থানায় পৌঁছে ওসির কাছে যাই। তার কাছে সব খুলে বলি। সহযোগিতা না করে উল্টো ওসি আমাদের নানাভাবে শাসিয়েছেন। এ সময় আমি পুলিশ ও গ্রাম থেকে আসা মানুষদের ভিকটিমকে নিয়ে হাসপাতালে পরীক্ষার দাবি করি। সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত থানায় ছিলাম, কারও সহযোগিতা পাইনি, উল্টো পুলিশ ধমক দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি আসি। একই বক্তব্য দিয়েছে ওই শিশুটি।

ওই শিশুর মা অভিযোগ করেন, যতবার ধর্ষণের ঘটনা তাকে বোঝাতে চেয়েছি, ততবার ঘটনাটিকে মিথ্যা ও সাজানো বলে ধমক দিয়েছেন ওসি। উল্টো তিনি শিশুটিকে আম চোর আখ্যা দিয়েছেন। এরপর নারী-শিশু হেল্প ডেক্সে নিয়ে ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নারী পুলিশ। সেখানেও একই বাক্য ছুড়ে দেওয়া হয়েছে ভিকটিমের পরিবারকে। পরে থানার গোলঘরে পুলিশ-জবেদের পরিবারের উপস্থিতিতে সালিশ হয়।

সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ওই ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল হাই বলেন, ঘটনা শুনে আমি ও চেয়ারম্যান আমীনুল ইসলাম মাসুম দুপুরে থানায় যাই। থানায় পৌঁছে চেয়ারম্যান ওসিকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে চলে আসেন।

গতকাল ওই ভিকটিমের বাড়িতে যান সদর থানার এসআই রুনা ও এসআই শিপন। এ সময় তারা ধর্ষণের ঘটনা এড়িয়ে অন্য বক্তব্য দিতে ওই শিশুকে নানাভাবে প্রভাবিত করেন বলে অভিযোগ করেন ওই শিশুর মা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন মাদারবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হারুন অর রশীদ। মূলত ওই শিশুর বক্তব্য ভিডিও করে নেওয়ার জন্য তারা আসেন।

এ প্রসঙ্গে এসআই রুনার কাছে ফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কলটি কেটে দেন। গতকালের ঘটনা জানতে সদর ওসিকে কল দেওয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ-সংক্রান্ত ঘটনায় ভিকটিম পুলিশের কাছে এলে দ্রুত মেডিকেল সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নারী-শিশু ট্রাইব্যুনালে হাজির করে জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করতে হবে। এখানে অন্য কোনো সূত্রকে প্রাধান্য দেওয়ার সুযোগ নেই।

রবিবার এসআই শিপন বলেন, জবেদ সিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নিয়ে আসি। এর পরের ঘটনা আমার জানা নাই। ঘটনা অসত্য বলে থানার গোলঘরে মীমাংসা হয়েছে বলে জেনেছি।

রবিবার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, তারা প্রথমে এক বয়স্ক লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিল। ওইদিন ওই বাড়ির কিছু আম পেড়েছে সে। তা নেওয়ার জন্য ব্যাগ নিতে মেয়েটি ওই ঘরে ঢুকলে ঘরের গৃহবধূ তাকে চোর বলে শায়েস্তা করেন। মেয়েটি এই চুরির অপবাদ ঢাকতে এমন ঘটনা সাজিয়েছে। ভিকটিমকে মেডিকেল পরীক্ষা করা যেত কি নাÑ এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, বয়স্ক লোকটাকে আনার পর দেখা গেল, বিষয়টি এমন নয়। অপবাদ ঢাকতেই এ কাণ্ড করেছে ওই শিশু, যা ইউপি চেয়ারম্যানও জানেন। নারী পুলিশ দ্বারাও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এমন আলামত পাইনি।

পটুয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও প্রশাসন) এবং সদর সার্কেল অফিসার সাজেদুর ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। এ সময় ভিকটিম পরিবারকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা