পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩ ১২:৪৭ পিএম
চট্টগ্রামের পটিয়ার জঙ্গল শ্রীমাই এলাকায় পাহাড়-টিলা কেটে মাটি লুট করে ইটভাঁটায় পাচার করছে একশ্রেণির মানুষ। প্রবা ফটো
চট্টগ্রামের পটিয়ার জঙ্গল শ্রীমাই ও লট শ্রীমাই এলাকার পাহাড়-টিলা থেকে দেদার মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এসব মাটি যাচ্ছে চন্দনাইশ উপজেলার অর্ধশত ইটভাঁটায়। পটিয়া ও চন্দনাইশের পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাহাড়-টিলা কাটছে মাটি ব্যবসায়ীরা।
পাহাড় কেটে পরিবেশের ক্ষতি করলেও দেখেও না দেখার ভান করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অর্ধশতাধিক পাহাড়-টিলা কেটে এরই মধ্যে সমতলভূমিতে পরিণত করে ফেলেছে তারা। অন্তত দুই ডজন এক্সকাভেটর প্রতিদিন পাহাড় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
পাহাড়-টিলা ছাড়াও সরকারি টি-এস্টেটের খাসজায়গার মাটি কেটে ১৫ থেকে ২০ ফুট গর্তের সৃষ্টি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, চাষযোগ্য জমির মাটিও কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে দিন দিন উর্বরতা শক্তি নষ্ট ও চাষাবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার দক্ষিণ সীমানা ও চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক ইটভাঁটা গড়ে উঠেছে। এসব ইটভাঁটায় শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন ৫০০ ট্রাক মাটির প্রয়োজন হয়। এ ছাড়াও প্রতি মৌসুমে একেকটি ইটভাঁটায় ১০ হাজার ট্রাক পর্যন্ত মাটি লাগে। মাটির এ চাহিদাকে পুঁজি করে পটিয়া-চন্দনাইশ এলাকায় গড়ে উঠেছে ১৫ থেকে ২০টি গ্রুপ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ইটভাঁটায় মাটি সরবরাহে পটিয়া চন্দনাইশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ তৌহিদ, ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি মেম্বার আনোয়ার পারভেজ দানু, স্থানীয় মোহাম্মদ হারুন, জসিম, হারুন, জাহেদ ও মহিম উদ্দীন। এরা প্রতিদিন প্রকাশ্যে এস্ককাভেটর দিয়ে পাহাড়-টিলা ও সরকারি খাসজমির মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাঁটায় মাটি সরবরাহ করছে।
মাটি সরবরাহ করা ইটভাঁটাগুলোর মধ্যে রয়েছে কাঞ্চনগরের এমএইচওয়াই ব্রিকস, বিবিএম ব্রিকস, মরিয়ম ব্রিকস, থ্রি বিএম ব্রিকস ও কেবিসি ব্রিকস এবং এসএবি ব্রিকস।
মাটি কাটার বিষয়ে ইউপি সদস্য মোহাম্মদ তৌহিদ বলেন, তার একটি এস্ককাভেটর আছে। তবে তা দিয়ে কোনো পাহাড়-টিলার মাটি কাটেন না। তিনি চন্দনাইশ পাহাড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি ও মৎস্য প্রজেক্ট খননে এস্ককাভেটর ব্যবহার করছেন।
সম্প্রতি পটিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ পাহাড়-টিলার মাটি লুট সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা জাহেদকে হাতেনাতে ধরে ১৫ দিনের জেল দেওয়া হয়। এ অভিযানে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত তিনটি পিকআপ আটক করা হয়। এর পরও থেমে নেই পাহাড়-টিলা কেটে মাটি লুটের অবৈধ কার্যক্রম। দিন-রাত একাধিক এস্ককাভেটর দিয়ে পাহাড়-টিলা কেটে মাটি লুট করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেও যেন কোনো মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের। ফলে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও গাছপালা বিলুপ্ত হয়ে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, পাহাড়-টিলা ও চাষাবাদের জমির মাটি কাটা মারাত্মক অপরাধ। এসব বিষয়ে প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।