সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৩ ১৩:২৯ পিএম
আপডেট : ২২ মে ২০২৩ ১৪:৩৮ পিএম
ফাইল ফটো
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ জেলা কক্সবাজার। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ দর্শনার্থী প্রতি মাসে এখানে বেড়াতে আসেন। জেলায় বিমানবন্দর থাকলেও নেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। তাই সিংহভাগ দর্শনার্থী বা অন্যরা কক্সবাজার যান দুই লেনের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে। ফলে সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে। দুর্ঘটনাও যেন এই সড়কের নিত্যকার চিত্র।
২০১৩ সালে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেনের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ১০ বছরে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান তিন দফা সমীক্ষা চালালেও অজানা কারণে আটকে আছে সওজের এই উদ্যোগ।
তবে মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প-২’ হিসেবে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সওজ বিভাগ চট্টগ্রাম সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে জাইকার সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরেও বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত হয়েছে। অর্থায়ন নিশ্চিত হলেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।’ তবে কবে নাগাদ এটির বাস্তবায়ন হতে পারে- সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
সওজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে সুইডিশ কনসালট্যান্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে সমীক্ষা চালায়। দুই বছর সমীক্ষা চালানোর পর ২০১৫ সালে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে ২২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে সুপারিশ করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সওজ বিভাগ এই মহাসড়ক ‘কন্ট্রোলড-অ্যাক্সেস হাইওয়ে’ হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা করে। এতে সড়কটির দৈর্ঘ্য কমে যায়। পরে দৈর্ঘ্য ধরা হয় ১৩৬ কিলোমিটার। এর জন্য ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন ধরে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করে সওজ বিভাগ।
এই ডিপিপিতে মহাসড়কটির প্রস্থ ধরা হয় ৮২ ফুট। দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য থাকবে পৃথক লেন। পাশাপাশি ৩৩টি সেতু, ১৩৯টি কালভার্ট, ১৩টি ফুটওভার ব্রিজ ও দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কথা রয়েছে। এ ছাড়াও মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৩১৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের কথা উল্লেখ রয়েছে।
পরে ২০১৯ সালে জাপানের ‘মারুবেনি’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান সড়কটিতে সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে ডিপিপি প্রস্তুত করে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে আরেক দফা সমীক্ষা চালিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। অর্থাৎ চার লেনে উন্নীত করতে সড়কটিতে তিন দফা সমীক্ষা করা হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সওজের দোহাজারী সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ইতোমধ্যে দুই লেনের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে একাধিকবার সমীক্ষা করা হয়েছে। এই মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে চার লেনের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক নির্মাণের বিষয়টি সামনে রেখে মহাসড়টির পটিয়ার ইন্দ্রপুলে, চন্দনাইশের বরুমতি খালের ওপর, দোহাজারীর শঙ্খ নদ ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর চারটি ছয় লেনের সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। যেহেতু সড়কটি খুব ব্যস্ততম, তাই পটিয়ার ক্রসিং এলাকা থেকে সাতকানিয়ার কেরানিহাট পর্যন্ত বর্তমান ১৮ ফুটের সড়কটি ৩৪ ফুট করে প্রশস্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দুটি প্যাকেজে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রসিং এলাকা থেকে পটিয়ার বাইপাস পর্যন্ত সড়কটি ৩৪ ফুট প্রশস্তকরণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পটিয়ার বাইপাস থেকে সাতকানিয়ার কেরানিহাট পর্যন্ত কাজের টেন্ডার চলছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এই প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সম্প্রতি উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। চট্টগ্রামের ক্রসিং থেকে পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারী, কেরানিহাট, আমিরাবাদ ও চকরিয়া পর্যন্ত অংশে ৫০টিরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এই বাঁকগুলোই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
চট্টগ্রাম সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, সড়কটির যানজটময় এলাকা ও বেশকিছু বাঁক চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে বাঁক কমাতে ২৪ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ওভারপাস, আন্ডারপাস ও একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে।