খুলনা সিটি নির্বাচন
খুলনা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩ ২০:৩০ পিএম
আপডেট : ২৬ মে ২০২৩ ২০:৫৫ পিএম
সংগৃহীত ফটো
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেওয়ায় দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জোটভুক্ত জামায়াতে ইসলামী খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে কোনো প্রার্থী দেয়নি। স্থানীয়ভাবে একাধিক নেতা মেয়র নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তে তারা বিরত থেকেছেনে। তবে দল থেকে বহিষ্কারসহ নানামুখী চাপ ও হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে বিএনপি-জামায়াতের ১২ নেতাকর্মী কেসিসি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন।
শুক্রবার (২৬ মে) এসব কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নেমেছেন। ফলে এই ১২ কাউন্সিলর প্রার্থীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিএনপি ও জামায়াত।
বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, কেসিসি নির্বাচনে অংশ নেওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের দলীয় কোনো পদ-পদবি না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপির সাবেক এই নেতাদের দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য কেসিসি নির্বাচনে বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে সাতজন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা কাজী ফজলুল কবির টিটো, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সদস্য সাজ্জাদ আহসান তোতন, সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মাজেদা বেগম, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে মাহাবুব কায়সার, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক আশফাকুর রহমান কাকন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি শমসের আলী মিন্টু ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর আমান উল্লাহ আমান।
তবে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে শমসের আলী মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করেছে রিটার্নিং অফিসার মো. আলাউদ্দিন ও আপিল কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী। বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন তিনি।
খুলনা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির প্রার্থীদের নিবৃ্ত্ত করা যাচ্ছে না। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতারাও অনেকটা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল অবলম্বন করছেন।
তারা আরও জানান, গাজীপুর নির্বাচনে বিএনপির যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু খুলনায় অংশ নেওয়া নেতাদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা এখনও কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ’আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে দলের সভা করে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সিটি নির্বাচনে বিএনপির কয়েকজন নেতা কাউন্সিলর পদে অংশ নিচ্ছেন। তাদের সবাইকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রে তালিকা পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে জামায়াতেরও পাঁচ নেতা সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডে দৌলতপুর থানা জামায়াতের নায়েবে আমির আজিজুর রহমান স্বপন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ড আমির মশিউর রহমান রমজান, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির মাস্টার শফিকুল আলম, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম পান্না ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল প্রার্থী হয়েছেন। তবে মশিউর রহমান রমজান ছাড়া অপর চার কাউন্সিলর প্রার্থী ২০১৩ ও ২০১৮ সালের কেসিসি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর ২০১৩ সালে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দলের নেতা যারা প্রার্থী হয়েছেন, তারা কেউই দলীয় ব্যানারে বা দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন করছেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সবাই নির্বাচন করছি। এর আগেও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আমি কাউন্সিলর ছিলাম। এলাকাবাসীর চাহিদা ও অনুরোধে এবারও প্রার্থী হয়েছি। এ ছাড়া ১ নম্বর, ১২ নম্বর, ১৮ নম্বর ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চারজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় কোনো সাপোর্ট কেউই নিচ্ছেন না।’
তিনি আরও বলেন, ’দল থেকে এখনও নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হলে সে বিষয়ে পরে বিবেচনা করে দেখা হবে।’
কেসিসি নির্বাচনে ৩১টি ওয়ার্ডে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রার্থী হয়েছেন। ভোটার রয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন।