× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এক শ্রেণিকক্ষ একই সময় দুই শিক্ষক দুই ক্লাস!

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩ ১০:০৩ এএম

আপডেট : ২৭ মে ২০২৩ ১০:২৫ এএম

চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের একটি শ্রেণিকক্ষ। ওই কক্ষে তখন ক্লাস চলছিল। মজার বিষয় হলো, একই দিনে, একই সময়ে শ্রেণিকক্ষের দুই প্রান্তে দুজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছিলেন। এক প্রান্তে চলছিল হিসাববিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস, অন্য প্রান্তে দ্বিতীয় বর্ষের। হিসাববিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস নিচ্ছিলেন রাজু সাহা স্যার, আর ব্যবস্থাপনার ক্লাস নিয়েছেন সুজিত বড়ুয়া স্যার। দিনটি ছিল চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ সরকারি হাজী মহসিন কলেজের এ চিত্র আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। শ্রেণিকক্ষ সংকটে এটি নিয়মিত ঘটে। এতে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটে, কক্ষের অভাবে অনেক সময় ক্লাসও হয় না।

হিসাববিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এইচএম জাহিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহের ওইদিন ছিল আমাদের তৃতীয় বর্ষের প্রথম ক্লাস। একই রুমে ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসও হয়েছে। রুমের একপাশে আমরা বসেছি, অন্যপাশে ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।’

একই কক্ষে, একই সময়ে দুজন শিক্ষকের ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হিসাববিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক রাজু সাহা বলেন, শ্রেণিকক্ষের সংকট, সে কারণে এভাবে ক্লাস নিতে হয়। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের জন্য মাত্র তিনটি কক্ষ বরাদ্দ।’

অথচ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে সেরা ফলাফল করেছে এ কলেজটি। চট্টগ্রামের সেরা কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম এ কলেজটির সব বিভাগেই শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে। এ ছাড়া কক্ষের অভাবে সেমিনার হয় না নিয়মিত।

কলেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক ও চার অনুষদের অধীনে ১৫টি বিভাগের অনার্স, মাস্টার্স আর ডিগ্রির বিভিন্ন কোর্সে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৩১ একরের এই ক্যাম্পাসে ৮টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ৭টিতে শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র ৩৬টি।

২০০৩ সালে তিনতলাবিশিষ্টি একাডেমিক ভবন-১ নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে সেই ভবনে আরও একটি তলা যুক্ত হয়। ২০১৪ সালে যুক্ত হয় ছয়তলা ফাউন্ডেশনের একতলাবিশিষ্ট আরেকটি ভবন। যে ভবনে দুটি শ্রেণিকক্ষ আছে। অর্থাৎ ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট চারটি শ্রেণিকক্ষ বেড়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে নতুন করে চালু হয়েছে ১০টি অনার্স ও ১০টি মাস্টার্স কোর্স। 

একটি শ্রেণিকক্ষে সর্বোচ্চ কতজন শিক্ষার্থীর ক্লাস চলতে পারে? কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। যেহেতু উচ্চ মাধ্যমিকে একটি সেকশনে ১৫০ জন ভর্তি কারানো হয়, তাই ধরে নেওয়া হয় এক ক্লাসে ১৫০ জনকেই বসানো হবে। অনার্সের ক্ষেত্রে কোথাও ১০০, কোথাও ৮০ জন করে বসানো হয়।’ সে হিসাবে কতটি শ্রেণিকক্ষ থাকা আবশ্যক তার কোনো তালিকা না থাকলেও অধ্যক্ষ বলেন, ‘ন্যূনতম ৫২টি কক্ষ থাকলেও আমরা চালিয়ে নিতে পারব, এমন একটা হিসাব করেছি। কিন্তু কক্ষ আছে মাত্র ৩৬টি। ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে।’ 

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে সর্বশেষ ভবন বরাদ্দ হয়েছিল ২০০০ সালে। ২০০৩ সালে চারতলা ফাউন্ডেশনের তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষে ‘একাডেমিক ভবন-১’ নামের ভবনটি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ২০০৯ সালে সেই ভবনে আরও একতলা বাড়ানো হয়। ওই ভবন নির্মাণের পর নতুন করে চালু করা হয় আরও ১০টি অনার্স ও ১০টি মাস্টার্স কোর্স। ২০০৯ সালে কলেজে শিক্ষার্থী ছিল ৮ হাজারের মতো। বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৭০। 

এর মধ্যে আর কোনো ভবন হয়নি হাজী মহসিন কলেজে। অবশ্য রাস্তার জন্য কলেজের অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর কাছ থেকে পাওয়া ছয়তলা ফাউন্ডেশনের দুই কক্ষের একটি ভবন যুক্ত হয়েছে। কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রদর্শক মুহাম্মদ আবদুন নূর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সিডিএর একটি রাস্তা নির্মাণের সময় কলেজের জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ক্ষতিপূরণের ৯৪ লাখ টাকা না নিয়ে সে সময় সিডিএ চেয়ারম্যানকে একটি ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছয়তলা ফাউন্ডেশনের দুই কক্ষের একটা ভবন হয়। কিন্তু সেটাকে আর বাড়ানো যায়নি। তিনি আরও বলেন, ‘এখন বারান্দায়ও মাঝেমধ্যে ক্লাস করাতে হয়। শ্রেণিকক্ষের সংকটে বারান্দায় কাচ বসিয়ে আলাদা রুম করা হয়েছে।’

গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রাবণী নাথ বলেন, ‘আমাদের প্রায়ই ক্লাস হয় না। শ্রেণিকক্ষে একই সময়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাসেরও সূচি থাকে। তারা ক্লাস করলে আমরা করতে পারি না। আবার আমরা করলে তারা পারে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদেরই ছাড় দিতে হয়।’

ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজিব মাহমুদ বলেন, তৃতীয় বর্ষে আমরা নিয়মিত ক্লাস পাইনি। সপ্তাহে একটি বা দুটি ক্লাস থাকে। এমনও হয়, দুই সপ্তাহেও একটা ক্লাস পাওয়া যায় না। জানতে চাইলে ইংরেজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপিকা ফাতেমা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমাদের মোট ৫টি বর্ষের ক্লাস। শ্রেণিকক্ষ আছে দুটি। ফলে পাঠদান ব্যাহত হয়। এর মধ্যে কোনো পরীক্ষা থাকলে সে সময় পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়।’ 

সবচেয়ে বেহাল অর্থনীতি বিভাগের। এ বিভাগের জন্য আলাদা কোনো শ্রেণিকক্ষ নেই। বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিভাগ এক ভবনে। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় পাশের কলা ভবনে গিয়ে ক্লাস করতে হয়। একেক দিন একেক কক্ষে ক্লাস। অনেক সময় দেখা গেছে, এক কক্ষে ক্লাসের শিডিউল আছে, কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।’ 

অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১০-১৫ বছরে ক্যাম্পাসে কোনো নতুন ভবন হয়নি। এর মধ্যে অনেকগুলো নতুন কোর্স যুক্ত হয়েছে, শিক্ষার্থী বেড়েছে। শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমাদের বিভিন্নভাবে এটা ম্যানেজ করতে হয়। পাঠদান সমস্যার বিষয়টি নানা জায়গায় জানিয়েছি। ওপর মহলে লিখেছি। এর মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় একটা ছয়তলা ভবন তালিকাভুক্ত হয়েছে। শিগগির এটা চূড়ান্ত হবে। তবে কয়টা শ্রেণিকক্ষ থাকবে তা এখনও জানি না। এ ভবন নির্মাণ হলে শ্রেণিকক্ষ সংকট কিছুটা দূর হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা