বরিশাল ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ড
মঈনুল ইসলাম সবুজ, বরিশাল
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩ ১০:১৫ এএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৩ ১০:২৩ এএম
বরিশাল সিটি করপোরেশন। ফাইল ছবি
বরিশাল সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ওয়ার্ড ১, ২ ও ৩। সিটি করপোরেশন হলেও ওয়ার্ডগুলোর বাসিন্দারা নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত। এখনও এসব ওয়ার্ড এলাকায় রয়েছে মাটির রাস্তা। অধিকাংশ সড়কে নেই সড়কবাতি। সন্ধ্যা গড়াতেই সৃষ্টি হয় ভুতুড়ে পরিবেশ। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জমে হাঁটুপানি। রয়েছে মশার উৎপাত। সংকট আছে বিশুদ্ধ পানিরও। আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে নগরজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। ভোটাররা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে এসব সমস্যা। কেউ সমাধান করেননি। যিনি এসব সমস্যা সমাধান করবেন, তাকেই ভোট দেবেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও বিজয়ী হলে সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া ও বিসিক রোডের একাংশ নিয়ে গঠিত ১ নম্বর ওয়ার্ড। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। ছোট-বড় প্রায় দেড়শ কলকারখানা রয়েছে ওয়ার্ডটিতে। অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম উৎস এই এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া শিল্পনগরীর কর্মরত কয়েক হাজার মানুষের বসবাস এই ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডটিতে মোট ভোটার ১১ হাজার ১৫৯ জন। কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুজন। তারা হলেনÑ বর্তমান কাউন্সিলর আমির হোসেন বিশ্বাস ও আউয়াল মোল্লা।
বাসিন্দারা জানান, কাউনিয়া এলাকায় এখনও রয়েছে মাটির রাস্তা। গত ১০ বছরে এখানে হয়নি তেমন উন্নয়নকাজ। অধিকাংশ সড়কে নেই সড়কবাতি। গৃহবর্জ্য ও বিসিক শিল্পনগরীর বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে একসময়কার খরস্রোতা লাকুটিয়া খাল। সেটি এখন মশা উৎপাদন কারখানায় পরিণত হয়েছে। খাল পরিষ্কার কিংবা রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেননি কাউন্সিলর। ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের বরিশাল-বাবুগঞ্জ সড়ক এবং সিটি করপোরেশনের বিসিক রোড ছাড়া অভ্যন্তরীণ সড়ক এবং পাড়ামহল্লার গলিগুলো উন্নয়ন করা হয়নি। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা এলেই হাঁটুপানি জমে থাকে। সংকট রয়েছে বিশুদ্ধ পানির। মাদকের বিষ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়।’
কাউন্সিলর প্রার্থী আউয়াল মোল্লা বলেন, আমি নির্বাচিত হলে স্থানীয়দের নিয়ে ওয়ার্ডের প্রধান প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করব। সেই অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করব।
বিসিক রোডের একাংশ, ফার্স্টলাইন, জানুকিসিংহ রোড, মনসাবাড়ির গল্লি, সিলেট ফ্যাক্টরি, কাউনিয়া প্রধান সড়ক এলাকা নিয়ে গঠিত ২ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ১২০ জন। ওয়ার্ডে প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা, মশার উৎপাত ও সরু গলি। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা। সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
ভোটার সুব্রতপাল বাপ্পি বলেন, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে অল্প বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পাড়া-মহল্লার সড়কগুলো সংস্কার কিংবা উন্নয়ন হয়নি। সরু গলিগুলো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি গত ২৫ বছরে। মাদকের ছোবলে নষ্ট হচ্ছে যুবসমাজ।
২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী চারজন। তারা হলেন বর্তমান কাউন্সিলর একেএম মর্তুজা আবেদীন, মো. আহসান উল্লাহ, রাহাত খান ও মুন্না হাওলাদার। প্রার্থী আহসান উল্লাহ বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে সমস্যার শেষ নেই, যা বিগত ২৫ বছর ধরে চলে আসছে। এলাকার মানুষ এখন পরিবর্তন চান। সেই জন্য আমি প্রার্থী হয়েছি। বিজয়ী হলে জেলাখাল খননের উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নেব।
পুরানপাড়া, মতাসার ও গাউয়ারসার এলাকা নিয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ড। ২০০২ সালে এই গ্রাম তিনটি সিটি করপোরেশন এলাকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও শহুরে উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন একটা লাগেনি। ওই এলাকায় মানুষের যাতায়াতের জন্য এখনও কাঠের সাঁকো পার হতে হয়। নেই পানির লাইন, সড়কবাতি। পুরো এলাকার ৯০ শতাংশ সড়ক কাঁচা ও আধাপাকা। এ ছাড়া এই এলাকার মানুষের ঘাড়ে চেপে বসেছে বর্জ্য ফেলার ডাম্পিং স্টেশনটি।
ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি নেতা সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক মিয়াসহ প্রার্থী হয়েছেন চারজন। অন্যরা হলেনÑ মোস্তাফিজুর রহমান অনিক, সালমা আক্তার ও মেহেদি হাসান।
মাহবুব হোসেন নামে মতাসারের এক ভোটার বলেন, ‘২০ বছর ধরে অনেক প্রতিশ্রুতি শুনে আসছি। কিন্তু উন্নয়নের ছোঁয়া মোটেও লাগেনি। ওয়ার্ডের প্রায় রাস্তাই মাটির। অনেকে বাড়ি থেকে বের হন বাঁশ ও কাঠের সাঁকো দিয়ে। সড়কবাতি তো এলাকার মানুষের কাছে স্বপ্ন। মোটকথা, সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা হলেও আমরা কিন্তু গ্রামেই বাস করি।’
বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান বলেন, বিএনপির হলেও আমি বর্তমান মেয়রের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সরকারি বিশেষ বরাদ্দ না পাওয়ায় অনেক কাজই করতে পারিনি। তবে ডাম্পিং স্টেশনটি নগরীর অদূরে তলতলিতে স্থানান্তরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু অর্থ ছাড় হয়নি। অর্থাভাবে নাগরিকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারিনি সত্য। কিন্তু সুখেদুঃখে তাদের পাশে ছিলাম। আবার নির্বাচিত হলে রাস্তাঘাট উন্নয়ন করব।