× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গারো পাহাড়ে বাড়ছে বসতি, চলছে মানুষ-হাতির সংঘাত

শেরপুর প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩ ১২:৫২ পিএম

গারো পাহাড়ে হাতির পাল। প্রবা ফটো

গারো পাহাড়ে হাতির পাল। প্রবা ফটো

গারো পাহাড়ে মানুষের বসতি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য, চলাচল ও নিরাপদ বাসস্থানের সংকটে পড়েছে বন্য হাতি। হাতিরা বাধ্য হয়ে লোকালয়ে আসছে। মানুষের বসতবাড়িতে হামলা করছে দলবেঁধে। এতে নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল ও গাছপালা। হাতিদের প্রতিরোধ করতে স্থানীয়রা বৈদ্যুতিক ফাঁদসহ নানা কায়দায় হত্যা করছে বন্য হাতি।

মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্বে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে শেরপুর জেলায় চার কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গারো পাহাড়ে গত বছর চার মাসের ব্যবধানে চারটি মৃত বন্য হাতি উদ্ধার করে বন বিভাগ। এলাকাবাসীর আক্রমণে হাতিগুলো মারা যায়। শ্রীবরদীতে হাতি হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় চার আসামি কারাগারে যায়। এরপর থেকে বৈদ্যুতিক ফাঁদে কমেছে হাতি মারার ঘটনা। হাতি ও মানুষের লড়াই নিরসনে গারো পাহাড়ের সীমান্ত দিয়ে তৈরি হচ্ছে বন্য হাতির অভয়ারণ্য। ইতোমধ্যে জরিপ কাজ প্রায় শেষ করেছে বন বিভাগ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে বনের জমি। জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত গারো পাহাড়। একসময় এই বনাঞ্চলে অবাধে ঘুরে বেড়াত বন্য হাতির দল। কিন্তু পাহাড়ে মানুষের বসতি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় হাতিদের চলাচল। তাদের চলাচলের পথ দখল করে বাগান করা হয়েছে। টিলা কেটে বানানো হয়েছে যাতায়াতের জন্য সড়ক। এ ছাড়া খাদ্যের চরম সংকটে পড়েছে বন্য হাতির দল। পাশাপাশি তারা নিরাপদ আবাসস্থলও হারাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই লোকালয়ে আসছে।

গত ১ মে সন্ধ্যায় সীমান্তের ওপার থেকে বুনো হাতির একটি দল বোরো ধানের ক্ষেতে নেমে আসে। শ্রীবরদীর হালুয়াহাটি গ্রামবাসী খবর পেয়ে লাঠি মশাল নিয়ে পাকা ধান বাঁচাতে হাতির দলকে তাড়া করে। এতে হাতিগুলো ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ধাওয়া দেয়। সে সময় রানীশিমুল ইউনিয়নের হাতিবর টিলাপাড়ার আব্দুল হামিদকে হাতি পায়ে পিষ্ট করে মেরে ফেলে। এর আগে গত ১৪ এপ্রিল শ্রীবরদী উপজেলার ঝুলগাঁও গ্রামের কৃষক আবদুল করিম ও ২৬ এপ্রিল নালিতাবাড়ী উপজেলার পূর্ব শমশ্চূড়া গ্রামের কৃষক বিজয় সাংমা হাতির আক্রমণে মারা যান।

বন বিভাগের তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের মধুটিলা, রাংটিয়া ও বালিজুড়ি রেঞ্জসহ জেলায় প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে রাংটিয়া রেঞ্জে ৮ হাজার ৮৮০ একর, মধুটিলা রেঞ্জে ৪ হাজার ২৩৫ একর এবং বালিজুড়ি রেঞ্জে ৭ হাজার ৫৮৫ একর বনভূমি রয়েছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে গারো পাহাড়ে স্থানীয়দের আক্রমণে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি বন্য হাতি মারা গেছে। বিপরীতে বন্য হাতির আক্রমণে জেলায় প্রায় ১০০ জনের মতো মানুষ মারা যান। স্থানীয় পাহাড়িরা জানান, তাদের ফসল ও জানমাল রক্ষা করতে হাতির সঙ্গে লড়াই করতে হয়। আর এই লড়াই এক বা দুই দিনের নয়, কয়েক যুগ ধরে চলে আসছে। মানুষের বসতি ও কৃষিজমি রক্ষার পাশাপাশি হাতির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখা না হলে এই সংঘাতের স্থায়ী নিরসন হবে না বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা।

শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের রাঙাজান গ্রামের জামাল মিয়া বলেন, ‘আমি দুই একর জমিতে ধান গারছি (রোপণ করা)। ধান পাইক্কা (পেকে) আসছে। এহন (এখন) হাতি প্রতি রাতেই নামে। ক্ষেতে যদি একবার নামে, তো সব খাইয়া নষ্ট করে ফেলবে।’

কাংশা ইউনিয়নের খ্রিস্টান পাড়ার ইলিসন সাংমা বলেন, ‘আমরা হুনতাছি (শুনতেছি) আত্তির (হাতি) জন্য গুনার (সড়কা) করব, যদি গুনার করে তাহলে বালাই (ভালো) অইব, আমরা শান্তিতে থাকবার পাইমু। ঠিকঠাক ব্যবস্থা নিলে আমগোর (আমাদের) ঘরে আর আত্তি (হাতি) আইব না।’

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘গারো পাহাড়ে হাতির অভয়ারণ্য করার দাবি করে আসছি। একই সঙ্গে হাতির খাদ্যের সংস্থান করার জন্য দাবি জানানো হলেও তা না করায় গারো পাহাড়ে মানুষ ও হাতির মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না। একই সঙ্গে হাতিকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করছি।’

বাংলাদেশ এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের প্রশিক্ষক আদনান আযাদ বলেন, ‘দুই যুগ আগেও গারো পাহাড়ে গহিন বন ছিল। কিন্তু দিন দিন বন উজাড় করে পাহাড়গুলো ন্যাড়া করা হয়েছে। হাতিগুলো যেখানে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করত, এখন সেসব জায়গা দখল হয়ে বাড়িঘর উঠেছে। হাতির জায়গা আমরা দখল করে নিয়েছি, এখন হাতি কোথায় যাবে?’

রাংটিয়া রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা মুকরুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গারো পাহাড়ে অভয়ারণ্যের জন্য জমি নির্ধারণ ও মালিকানা চিহ্নিত করার কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা নিয়মিত দখলদারদের উচ্ছেদ করে বনের জমি উদ্ধার করছি।’

বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার হাতি চলাচলের এলাকাকে বন্য হাতির অভয়াশ্রম করা হবে। এই এলাকায় কোনোভাবে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হাতি মারা যাবে না। যদি কেউ এই কাজ করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা