× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাইক্কা বিলের নাইরলি হাঁস

আ ন ম আমিনুর রহমান

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩ ১০:২৫ এএম

বাইক্কা বিলে শাপলা পাতার পাশে ব্যস্ত নাইরলি হাঁস। ছবি- লেখক

বাইক্কা বিলে শাপলা পাতার পাশে ব্যস্ত নাইরলি হাঁস। ছবি- লেখক

মার্চের এক রোদেলা দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাইক্কা বিল জলাভূমি অভয়ারণ্যে গেলাম। এ সময় খুব বেশি হাঁসজাতীয় বা অন্যান্য পরিযায়ী পাখি থাকার কথা নয়। বিলে তেমন একটা পাখিও যে দেখা যাচ্ছে তা নয়। বিলের শুরুতেই চার-চারটি বড় পানকৌড়ির দেখা পেয়ে গেলাম। চেহারা দেখেই বোঝা গেল পালকে প্রজননের রঙের ছোঁয়া লাগা শুরু হয়েছে। এদের দেশত্যাগ করার সময় হয়ে গেছে। দু-চার দিনের মধ্যে চলে যাবে নিশ্চিত। এরপর তিন-তিনটি আবাসিক পাখি; যেমন বালিহাঁস, হলদে বক ও কালেম পাখির দেখা পেলাম। ওরা সারা বছরই এদেশে থাকে ও ডিম-ছানা তোলে। হাঁটতে হাঁটতে টাওয়ারের কাছে চলে এলাম। এবার নৌকায় উঠলাম। খানিকটা এগোতেই দুটি রাঙা দিঘেরি হাঁসের দেখা পেলাম। এরপর সাক্ষাৎ হলো কালকুচের বিশাল একঝাঁকের সঙ্গে। কিন্তু নৌকা ওদের কাছাকাছি যেতেই ওরা যেন পানির ওপর ১০০ মিটার স্প্রিন্ট প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ল! অন্য পরিযায়ী পাখিরা এ সময় চলে গেলেও ওরা দেখছি আছে বেশ সংখ্যায়। তবে শিগগির চলে যাবে। ওদের স্প্রিন্ট শেষ হতেই একাকী একটি ছোট আকারের হাঁসকে শাপলা পাতার পাশে খাবার খোঁজায় ব্যস্ত দেখলাম।

হাঁসটিকে আগেও দেখেছি, তবে এত কাছ থেকে নয়। কোনো শব্দ না করে ধীরে ধীরে ওর একদম কাছে চলে গেলাম। খাওয়ায় ব্যস্ত থাকায় কি না জানি না, ওর মধ্যে চলে যাওয়ার কোনো তাড়া দেখলাম না। কাজেই পুরুষ হাঁস বা হাঁসটির বেশকিছু ভালো ছবি তুলতে সক্ষম হলাম। 

বাইক্কা বিলের শাপলা পাতার পাশের এ হাঁসাটি এদেশের বহুল দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি নাইরলি হাঁস। জিরিয়া হাঁস, ইটাপেরি হাঁস বা গাঙ রৈব নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Garganey বা Blue-winged Teal। অ্যানাটি গোত্রের এ হাঁসটির বৈজ্ঞানিক নাম Spatula querquedula। ওদের মূল আবাস ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল।

নাইরলি মাঝারি আকারের হাঁস। প্রাপ্তবয়স্ক হাঁসের দৈর্ঘ্য ৩৭-৪১ সেন্টিমিটার (সেমি) ও প্রসারিত ডানা ৫৮-৬৯ সেমি। হাঁসা ও হাঁসির ওজন যথাক্রমে ২৬০-৫২০ ও ২৪০-৫৮৫ গ্রাম। প্রজনন মৌসুমে হাঁসা ও হাঁসির পালকের রঙে বেশ পার্থক্য দেখা যায়। হাঁসার গাঢ়-বাদামি মাথার চাঁদি হয় কালো। চোখের ওপর থাকে সাদা চওড়া ভ্রু-রেখা। মুখমণ্ডল, ঘাড় ও গলা গাঢ়-বাদামি। পিঠ, পেটের নিম্নাংশ ও লেজের তলা বাদামি এবং তাতে থাকে কালো কালো বুটি। খয়েরি বুকে গাঢ় দাগ। সাদাটে পেটের দুপাশে ছোট ছোট রুপালি দাগ। ডানার ওপরটা ধূসর। হাঁসির পালক বাদামি ও তাতে গাঢ়-বুটি। ভ্রু-রেখা অস্পষ্ট। হাঁসা-হাঁসির নির্বিশেষে চোখ ঘন বাদামি। চঞ্চু কালচে-বাদামি। পা, পায়ের পাতা ও নখ কালচে। প্রজনন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় হাঁসা ও হাঁসি দেখতে একই রকম, শুধু ডানার পালকে কিছুটা পার্থক্য থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁসার ডানার পতাকা ও বাদামি দেহতল ছাড়া বাদবাকি অংশ হাঁসির মতোই। 

শীতে দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের জলাশয়ে নাইরলি হাঁসের আগমন ঘটে। দিবাচর ও সন্ধ্যাচারী হাঁসগুলো সচরাচর মাঝারি থেকে বড় দলে বিচরণ করে। অন্যান্য প্রজাতির পরিযায়ী হাঁসের সঙ্গে মিশ্র দলেও দেখা যায়। দ্রুত উড়তে পারে; ওড়ার সময় ডানায় হিস্ হিস্ শব্দ হয়। ওরা হেঁটে হেঁটে ও পানিতে মাথা ডুবিয়ে জলজ উদ্ভিদের বীচি, পাতা ও কাণ্ড খুঁজে খায়। কদাচ কীটপতঙ্গ, শূককীট, চিংড়ি ও কাঁকড়া খায়। হাঁসা ‘ড্রিইইইই...’ ও হাঁসি ‘ওয়ায়েহ-ওয়ায়েহ...’ শব্দে ডাকে।

এপ্রিল থেকে মে অর্থাৎ প্রজনন মৌসুমে মূল আবাস এলাকার মাটিতে তৃণলতার ওপর বা ঘাসবনে ঘাসের ওপর পালক বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৮-১২টি, রঙ পীতাভ। হাঁসি একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটে ২১-২৩ দিনে। ছানাদের ওড়ার পালক গজায় ৩৫-৪৯ দিনে। আয়ুষ্কাল ছয়-সাত বছর।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা