পিরোজপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩ ১৭:৪৩ পিএম
আপডেট : ০৬ জুন ২০২৩ ১৮:৪৮ পিএম
দুই ওসিকে দায়ী করে চিরকুট লিখে ‘আত্মহত্যা’।
‘আমি নিরদোশ (নির্দোষ)। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল হক আর পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মো. হোসেন। আমি ইন্দুরকানী থানার ওসির টাকা চুরি করি নাই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার মৃত্যুর পর পোস্ট মর্টেম (ময়নাতদন্ত) না করা আমাকে মামার বাড়িতে দাফন করবেন।’ মৃত্যুর আগে এমন চিরকুট লিখে গেছেন পিরোজপুর সদর থানায় কর্মরত ঝাড়ুুদার আল মামুন (৪০)।
সোমবার (৫ জুন) সকালে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামের একটি বাজারে বিষপানের পর রাতে ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান মামুন। ইন্দুরকানী উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামের আবুল কালাম শেখের ছেলে মামুন প্রায় ১০ বছর ইন্দুরকানী থানায় ঝাড়ুদারের চাকরি করেন। প্রায় দুই মাস আগে তিনি পিরোজপুর সদর থানায় বদলি হয়ে আসেন। বাড়ি থেকে এসে গিয়েই সেখানে দায়িত্ব পালন করতেন তিনি।
মামুনের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, তার স্বামী মামুন রবিবার বিকালে বাড়ি ফেরার পর তাকে খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পর তিনি জানান, মসজিদ থেকে একটি জায়নামাজ চুরির অভিযোগে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন তাকে গালমন্দ করার পাশাপাশি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন।
এ ঘটনায় মামুন কোনো অঘটন ঘটাতে পারেন, এমন আশঙ্কায় পরিবারের সদস্যরা পুরো বিকাল ও রাতভর তাকে পাহারা দেন। সকালে বাজারে গিয়ে আগাছা নিধনের ঔষধ কিনে তা পান করেন মামুন। এরপর স্থানীয়রা দ্রুত তাকে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সেখান থেকে তাকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে রওনা হন স্বজনরা। এরপর পথে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
মামুনের স্ত্রীর অভিযোগ, ইন্দুরকানী থানায় থাকাকালীন ওই থানার ওসি এনামুল হক তার স্বামীর ওপর বিভন্নভাবে নির্যাতন করতেন। এমনকি তিনি পিরোজপুর সদর থানায় যাওয়ার পরও ইন্দুরকানী থানার ওসি সেখানকার ওসির কাছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলেছেন যাতে সেখানেও তিনি নির্যাতিত হন।
ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, ‘আমাদের থানায় কোনো ঝামেলা ছিল না। সে তিন মাস আগে বদলি হয়েছে। তার স্ত্রীর সঙ্গে একটু ঝামেলা ছিল। সেটা নিয়ে তাদের শান্ত থাকতে বলেছি। কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি তাকে বদলি করেছিল। তার আত্মহত্যার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’
পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন জানান, থানায় চুরি কিংবা মামুনকে গালমন্দ ও মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে মামুনের আত্মহত্যার বিষয়টি জেনেছেন বলে জানান পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান। তবে তাকে গালমন্দ কিংবা মারধরের কোনো বিষয় তার জানা নেই বলেও জানান পুলিশ সুপার। এ ছাড়া এ বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগও পাননি।
পুলিশ সুপার আরও জানান, মামুনের লেখা চিরকুটের বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছেন। মামুন এ বিষয়ে আগে কখনও তার কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
মামুন ও মরিয়ম দম্পতির আফসানা আক্তার মীম নামের ১৬ বছরের একটি মেয়ে এবং আব্দুল্লাহ আল কাওসার নামে ৮ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।