নওগাঁ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৩ ১৬:৪৯ পিএম
আত্রাইয়ের পতিসরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মোৎসব উপলক্ষে আয়োজিত মাসব্যাপী যাত্রাপালায় চলে নগ্ন নৃত্য। প্রবা ফটো
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পতিসরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মোৎসব উপলক্ষে আয়োজিত মাসব্যাপী যাত্রাপালায় ব্যাপক অশ্লীলতাসহ নগ্ন নৃত্যের অভিযোগ উঠেছে। ১ জুন থেকে ‘আনন্দ অপেরা’ যাত্রা মঞ্চে এই নগ্ন নৃত্য চলছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এমন নৃত্য বন্ধ না হলে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়বে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মে জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় আয়োজন হিসেবে পতিসরে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীন মেলার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র জন্মোৎসব শেষ হয়। এরপর স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের রবীন্দ্রভক্ত দাবি করে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর নামে জেলা প্রশাসক বরাবর মাসব্যাপী যাত্রাপালার আবেদন করে অনুমতি নেন। যেখানে গ্রামীন যাত্রাপালার নামে ১ জুন থেকে নগ্ন নৃত্য পরিবেশন করা হচ্ছে। রাত ১১টার পর থেকে চলে এই নগ্নতা। সেখানে ২০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাত যত গভীর হয়, যাত্রাপালার নামে নগ্নতা ততই বাড়ে। কবিগুরুর জন্মোৎসবের নামে এমন অশ্লীলতায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে এই যাত্রাপালা বন্ধের দাবি করেছেন।
পতিসর এলাকার বাসিন্দা মখলেছুর রহমান বলেন, ‘জীবনে যাত্রা দেখেছি অনেকবার। কিন্তু এমন নগ্ন নৃত্য দেখিনি কখনো। এ নৃত্য বন্ধ না হলে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়বে। প্রশাসন কীভাবে এমন যাত্রার অনুমতি দিলো, বুঝলাম না।’
স্থানীয় যুবক আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেখানে যাত্রা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে তার ২০ গজ দূরেই রথীন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা ও ১০০ গজ দূরে হাফেজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। রাতভর গানের তালে নগ্ন নাচ চলছে। সেখানে যুবকদের উপচে পড়া ভিড়। এসব বন্ধ করা দরকার। যারা এসব আয়োজন করেছে, তারা প্রভাবশালী। যার কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। আর প্রশাসনও নিরব রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য চৌধুরী গোলাম মোস্তফা বাদলের ছত্রছায়ায় এমন আয়োজন চলছে এবং তিনি বাটোয়ারা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা বাদল বলেন, ‘মেলায় নিয়ম মেনে যাত্রাপালা চলছে, কোনো অশ্লীলতা হচ্ছে না।’ মেলায় ধারন করা অশ্লীল নৃত্যের ভিডিও ও ছবি তাকে দেখানো হলে চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং বলেন, ‘জেলা প্রশাসন জেনে-বুঝে মেলার অনুমতি দিয়েছে।’
যাত্রা মঞ্চের সমন্বয়কারী মতিউর রহমান বলেন, আমরা রবীন্দ্র ভক্ত। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের সুস্থ্য সাংস্কৃতি র্চচা বিকশিত করতে মাসব্যাপী যাত্রাপালার আয়োজন করেছি। যেখানে রবীন্দ্র ভক্তরাসহ সবাই এসে বিনোদন উপভোগ করতে পারবে। এখানে এসে কিশোর-যুবকরা আনন্দ করছে। আমাদের এই যাত্রাপালার মাধ্যমে সারা দেশে সুস্থ্য সাংস্কৃতির উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। এখানে কোনো ধরনের নগ্নতা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।
আত্রাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লুৎফর রহমান বলেন, যাত্রায় অশ্লীলতার বিষয়ে জানতে পেরে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ভোরে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যাত্রার অনুমতির বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।