মৌলভীবাজার প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩ ১২:৫২ পিএম
ফাইল ফটো
পাহাড়ি এলাকা ও গভীর বনাঞ্চলঘেরা মৌলভীবাজারে বেড়েছে সাপের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বেড়েছে সাপের কামড়ে নিহত ও আহতের সংখ্যাও। প্রায় প্রতিদিনিই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সাপের কামড়ে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বছরেই এখন পর্যন্ত জেলার সাত উপজেলায় সাপের কামড়ে দুজন নিহত এবং দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ৭৯ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে বিষধর সাপ হলো ২৭ প্রজাতি। এসব সাপের বেশিরভাগই রয়েছে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বনাঞ্চলে।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কমলগঞ্জে এক মণিপুরি নৃগোষ্ঠীর নারী ও এক পুরুষ চা-শ্রমিক সাপের কামড়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জুন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সাপের কামড়ে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা-বাগানে সাপের কামড়ে মৃত্যুবরণ করেন চন্দ্র রিকিয়াশন নামে এক চা-শ্রমিক। তিনি শ্রীগোবিন্দপুর চা-বাগানের মৃত নরেশ রিকিয়াশনের ছেলে। ঘটনার দিন পার্শ্ববর্তী পাত্রখোলা চা-বাগানে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি সাপের কামড়ে মৃত্যুবরণ করেন।
গত ২৩ মে কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের হিরামতি গ্রামের বাবুল সিংহের স্ত্রী ঝর্ণা সিনহা বাড়ির পাশে কচু কাটতে গেলে বিষধর সাপ তাকে কামড় দেয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে কমলগঞ্জ ও পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে সাপের কামড়ের ইনজেকশন অ্যান্টিভেনম দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ জুন পর্যন্ত তিনি রেড আই ক্যাট স্নেক, অজগর সাপ, ফণিমনসা, আরডোরা সাপ ও আই ক্যাট স্নেক প্রজাতির ১২টি সাপ শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি, বাজার ও খামার থেকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সাপ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সাপগুলো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও অন্যান্য বন থেকে লোকালয়ে চলে আসে, যা মানুষের নজরে পড়লে আমাদের খবর দেন। আমরা গিয়ে সাপগুলো উদ্ধার করি।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জেলার নিম্নাঞ্চল অনেকটা তলিয়ে যায়। এ সময় গ্রামাঞ্চলের বাড়িঘর ও ঝোপঝাড়ে পানি ওঠে। ঝোপঝাড়ে পানি ওঠার কারণে সাপের আবাসস্থল পানিতে নিমজ্জিত হয়। সে ক্ষেত্রে সাপ শুকনো স্থানে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। তাই এ সময়ে আমাদের অধিক সতর্ক থাকতে হবে।’
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, জেলার সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপের কামড়ের ইনজেশকন অ্যান্টিভেনম মজুদ রয়েছে। অনেক সময় হাইপারটেশন ও বিভিন্ন রোগাক্রান্ত মানুষকে সাপে কামড় দিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা যায় না। সেখানে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে ঝুঁকি থাকে।