কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩ ১৫:৫৫ পিএম
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৩ ১৬:৫৭ পিএম
জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। প্রবা ফটো
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক ফাঁসি কার্যকর করা আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দীর্ঘ ৩২ বছর কারাভোগের পর রবিবার (১৮ জুন) দুপুর ১২টার দিকে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় ঘাতক, ছয়জন যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন শাহজাহান। ২০০১ সাল থেকে তিনি ফাঁসি কার্যকর শুরু করেন।
তবে জল্লাদ শাহজাহানের দাবি, তিনি অন্তত ৬০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। হত্যা ও অস্ত্র মামলায় তার ৪২ বছরের সাজা হয়েছিল। ফাঁসি কার্যকর ও অন্যান্য দায়িত্ব পালনের কারণে তার সাজার মেয়াদ কমিয়ে ৩২ বছর করা হয়। তার সাজার মেয়াদ এ দিন শেষ হলো।
কারা সূত্রে জানা গেছে, সাজার মেয়াদ কমানোর জন্য কয়েদি থেকে জল্লাদ বনেছিলেন শাহজাহান। একের পর এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন চার দেয়ালের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেতে। অবশেষে তার সেই স্বপ্ন সত্যি হলো।
১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন শাহজাহান। তার জন্ম নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে। তিনি তিন বোনের একমাত্র ভাই। বাবার নাম হাসান আলী ভূঁইয়া। মাতা সব মেহের। পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত। ১৯৭৪ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন। তিনি নরসিংদী জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি জেলার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, একবার তার গ্রামে নারী ঘটিত একটি ঘটনা ঘটে। শাহজাহানের দুই বন্ধুসহ তার নামে অভিযোগ ওঠে। গ্রামে তাদের নিয়ে বিচারে বসা হয়। সেই বিচারে তাকে অপরাধী হিসেবে সাজা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অপমান সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নেন অপরাধ জগতে প্রবেশ করে এই অপমানের প্রতিশোধ নেবেন।
১৯৭৯ সালে মাদারীপুর জেলায় শাহজাহান উল্লেখযোগ্য একটি অপরাধ সংঘটিত করেন। এটাই ছিল তার জীবনে সর্বশেষ অপরাধ কার্য। সেখান থেকে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ মানিকগঞ্জে চেক পোস্ট বসালে শাহজাহান তার ওই এলাকার বাহিনীর মাধ্যমে জেনে যান। সব জেনেই ওই এলাকা দিয়ে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। মানিকগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিও হয়, কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। এরপর ঢাকায় পৌঁছে যখন নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা হন, পথিমধ্যে পুলিশ তাকে আটক করে ফেলে। তার মুক্ত জীবনের এখানেই সমাপ্তি এবং এরপর থেকে তার বন্দিজীবন শুরু।
১৯৭৯ সালে আটক হওয়ার আগে ও পরে তার নামে মোট ৩৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতি মামলা এবং অবশিষ্ট ৩৪টি হত্যা মামলা।
জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ’কারা রেকর্ড অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন শাহজাহান। ৪২ বছরের সাজার মধ্যে প্রতি ফাঁসির জন্য দুই মাস কারা রেয়াত পেয়েছেন তিনি। কারাবিধি অনুযায়ী, আচার-আচরণ এবং অন্যান্য কারণে সব মিলিয়ে ১০ বছর ৫ মাস রেয়াত পেয়েছেন। সাজা খেটেছেন ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন।’