× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ

স্বদেশে ফিরে মুক্ত জীবনের প্রত্যাশায় রোহিঙ্গারা

নুপা আলম, কক্সবাজার

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩ ১০:১৯ এএম

রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ফাইল ফটো

রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ফাইল ফটো

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার বৃহৎ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এখন বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলোতে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ-কুতুপালংয়ের ৩৩টি আশ্রয়শিবির এবং ভাসানচরে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে।

নিজ বাসভূমি ছেড়ে গত ছয় বছর, এমনকি অনেকে তারও বেশি সময় আগে থেকে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলোতে আছে। অনেকটাই খাঁচায় বন্দি জীবন তাদের। কেমন আছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির ও ভাসানচরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা? কেমন কাটছে তাদের জীবন? আর তাদের চাওয়াই-বা কী?

আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। এই দিনকে ঘিরে ফের নতুন করে আলোচনায় এসেছে রোহিঙ্গা সংকট। কেমন আছে রোহিঙ্গারা- সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অধিকাংশই স্বদেশে ফিরতে চায়। দ্রুত প্রত্যাবাসন এখন তাদের একমাত্র দাবি। নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে স্বাধীন জীবন উপভোগ করতে চায় তারা। বিশ্ব শরণার্থী দিবসের এই দিনে এসে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে দীর্ঘসময় রেখে দেওয়ার চক্রান্ত করছে কিছু গোষ্ঠী বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়- এমনটাও মনে করে অনেক রোহিঙ্গা। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা বেশি। যারা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ-কুতুপালংয়ের ৩৩টি ক্যাম্প এবং ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে বসবাস করে। সব মিলিয়ে ১২ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত আছে। 

এসব রোহিঙ্গা ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবসে’ এসে স্বদেশে ফেরার আকুতি প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গারা বলেছে, ক্যাম্পের জীবন দুর্বিষহ। তারা অনেকটা একঘেয়ে ও খাঁচায় বন্দি পাখির মতো জীবন অতিবাহিত করেছে টানা ছয় বছর। এমনকি অনেকে তারও বেশি আগে থেকে। এখানে বারবার প্রত্যাবাসনের আলোচনা হলেও, তারা ফিরতে পারেনি স্বদেশ মিয়ানমারে। এর মধ্যে জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় তাদের জীবন আরও কষ্টের হয়ে পড়েছে। এ জীবনের বিপরীতে স্বদেশে ফিরে মুক্ত জীবন চায় তারা। তার জন্য দ্রুত সময়ে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছে তারা।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস নিয়ে উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়ার ১ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা ডা. জুবায়েরের সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত ছিল। 

তিনি বলেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে খাবারসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু এরই মধ্যে সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কখন জানি বন্ধ হয়ে যায়। আশ্রয়শিবিরের জীবন খাঁচায় বন্দি জীবন। আমরা স্বদেশে ফিরতে চাই। দ্রুত প্রত্যাবাসন এখন রোহিঙ্গাদের একমাত্র দাবি। পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে স্বাধীন জীবন উপভোগ করা এখন রোহিঙ্গাদের একমাত্র চাওয়া। 

একই ক্যাম্পের মাস্টার কামাল জানিয়েছেন, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে তার প্রাণ মিশে আছে। পূর্বপুরুষের স্মৃতি ওই মাটিতে। সেখানে স্বজনদের কবর, নিজস্ব চাষের জমি, গবাদি পশু, বাগানবাড়ি রয়েছে। আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে মিলেমিশে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নে তারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। 

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের মেহমান। বাড়িতে মেহমান এলে আতিথেয়তা থাকে কয়েক দিনের। বেশি দিন হলে তা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়াই আমাদের একমাত্র দাবি।

রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মৌলভী নূর হোসেইন জানান, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে দীর্ঘসময় রেখে দেওয়ার চক্রান্ত করছে কিছু গোষ্ঠী বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। নিজেদের দেশ থাকতে আমরা এখানে আর ভাসমান জীবন কাটাতে চাই না। এ ছাড়া মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের অনেক ভাই এখনও ভুলের মধ্যে রয়েছেন। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ইত্যাদির যে দাবি আমরা তুলছি, সেগুলো বাংলাদেশে থেকে সম্ভব নয়। নিজের দেশ জন্মভূমিতে বসবাস করা আমাদের জন্য অনেক স্বস্তির।

টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা জাফর আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের জাতিগত ঐতিহ্য আছে, নিজেদের দেশ আছে। আমরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। আমরা এখন আমাদের দেশে ফিরে যেতে চাই।

কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মিয়ানমারের সঙ্গে একযোগে কাজ চলছে। আমরা যা প্রত্যাশা করেছিলাম তা পূরণ হয়নি। তবু আলোচনা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা দুইবার এখানে এসেছেন। রোহিঙ্গা নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলও মিয়ানমার সফর করেছে। আমাদের আশা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান মনে করি প্রত্যাবাসন। আমাদের সকল পরিকল্পনাও এই প্রত্যাবাসন ঘিরে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। তাই রোহিঙ্গা নিয়ে আমাদের সকল কার্যক্রম প্রত্যাবাসনবান্ধব করেছি। আন্তর্জাতিক মহল, এনজিওসহ ক্যাম্পকেন্দ্রিক কার্যক্রম প্রত্যাবাসন উপযোগী করে সাজানো হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গারাও স্বদেশে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। আশা করছি এই প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা