আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৩ ২০:৩০ পিএম
নিহত মো. মিশকাত। ছবি : প্রবা
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার ১৪ বছর বয়সি শিশু মো. মিশকাত। চারদিন আগ থেকে জ্বরে ভুগছিল সে। মিশকাতের বাবা শহরের একটি রাইস মিলে কাজ করেন। বাড়িতে মা ও বড় বোনের সঙ্গে থাকত মিশকাত। জ্বর হওয়ার পর স্থানীয় ফার্মেসি থেকে জ্বরের ওষুধ কিনে খাওয়ান তার মা। চারদিনের মাথায় মিশকাতের বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া শুরু হলে গত বৃহস্পতিবার তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানোর কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যায় মিশকাত।
শনিবার (২২ জুলাই) মিশকাতের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মিশকাতের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেদিনই তার মৃত্যু হয়েছে।’
বোয়ালমারী উপজেলার মধ্যম কদুরখীল খলিল খলিফার বাড়ির ওসমান গনীর সাত সন্তানের মধ্যে মিশকাত সবার ছোট ছিল। কধুরখীল ইউনাইটেড মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত সে। শুক্রবার মিশকাতের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মিশকাত ফুটবল খেলতে পছন্দ করত।
মিশকাতের চাচা মো. রাসেল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চিকিৎসা শুরু করার সময়ও পেলাম না। বমি করার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাই। সেখান থেকে বলেছে তাদের আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল নিয়ে আসি। মেডিকেলে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। বেডে শোয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে সে। এক ঘণ্টার মধ্যে ছেলেটা মারা গেল, চিকিৎসার সুযোগও দিল না।’
রাসেল জানান, চারদিন আগ থেকে মিশকাতের জ্বর আসে। জ্বর হওয়ার পর স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়ানো হয়েছিল। তখন জ্বর ভাল হয়ে যায়। হঠাৎ বমি করে সে। তিনি বলেন, ‘এখন জানতেছি জ্বর হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। আগেতো বুঝতে পারি নাই। পারলে ছেলেটাকে বাঁচাতে পারতাম।’
মিশকাতসহ চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছে ২২ জন। এর মধ্যে জুলাইয়ের ২২ দিনে মারা গেছে ১৩ জন। আগের মাসে এই সংখ্যা ছিল ৬ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টা আরও ১৪৩ জন নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, যা এ বছর এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের ঘটনা। এর আগে এক দিনে সর্বোচ্চ ১১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল গত বুধবার।
এই বছর চট্টগ্রামে শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯২৩ জন। যার মধ্যে ১ হাজার ৪৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন গত ২২ দিনে। জুনে আক্রান্ত ছিল ২৮৩ জন। জুনের পাঁচ গুনেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত তিন সপ্তাহে।