চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ২১:৫৩ পিএম
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ২২:১২ পিএম
চট্টগ্রামে সিসিআরএসবিডির আয়োজিত পার্বত্য অঞ্চলে চলমান সংকট ও উত্তরণ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী। ছবি : প্রবা
আওয়ামী লীগ সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, তারা (বিএনপি) যে বড় বড় কথা বলছে, কে এই নেতৃত্বটা দেবে। ভুয়া, ভাঁওতাবাজি কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে। তাদের শাসনামলে কী উন্নয়ন হয়েছে, তারা দেখাতে পারবে? মানুষ কি ভুলে গেছে? আওয়ামী লীগ কি এমন দল ধাক্কা দিলে পড়ে যাবে। এত সহজ নয়, অনেক দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আজকের এই জায়গায় এসেছে। বছরের পর বছর জাতির পিতার দীর্ঘ সংগ্রামের পর আওয়ামী লীগ আজ এই জায়গায় এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানাধীন বিজিএমইএ ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি) নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সংকট ও উত্তরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সেমিনারে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ’আমার খুব দুঃখ লাগে, যখন বিএনপির কিছু দায়িত্বশীল লোক দায়িত্বহীনভাবে কথা বলে। বাংলাদেশে কী হয়েছে? দেশের এমন কী হয়েছে যে আওয়ামী লীগকে দেশ থেকে পালাতে হবে। কে পালাবে? পালানোর মতো কি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে? আমাদের কথায় কথায় বলা হয় পালানোর জন্য। আমরা চোর নাকি ডাকাত? তাদের নেতা পালিয়েছে লন্ডনে। তাদের নেতা জেলে, মামলার আসামি হয়ে। আমরা পালাব কেন? আমরা কোথায় পালাব? আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, এটা আমাদের দেশ। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির দেশ।’
ভোট দিলেই শুধু গণতন্ত্র হয় না মন্তব্য করে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ’গণতন্ত্রের সংজ্ঞা শুধু ভোটপ্রদান নয়, এর চেয়ে অনেক বেশি। আজকে যে আপনারা স্বাধীনভাবে কথা বলছেন, এটি গণতন্ত্রের একটা অংশ। দেশে যদি কর্তৃত্ববাদী সরকার থাকত, আপনারা নিশ্চয়ই স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারতেন না। আমি নির্দিষ্ট করে কোনো দেশের নাম বলব না, ওখানে অনেক নিয়ন্ত্রিত কথাবার্তা বলতে হয়। ফেসবুক বলেন, ইউটিউব বলেন, অনেক ফ্যাক্ট চেক হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সবকিছু আন-ফিল্টারড। আমার মনে হয়, অতিরিক্ত স্বাধীনতা দিলে যে মানুষ বিনষ্ট হয়, দেশে এ ধরনের পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা (বিএনপি) কীভাবে বলছেন গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে। শুধু ভোট হলেই গণতন্ত্র হয় না। বাকি সবকিছুকে বিবেচনায় নিয়ে আসতে হবে। আপনারা ক্ষমতায় থাকার সময় কী করেছেন? ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন এখনও কেউ ভোলেনি। সুতরাং আপনারা এখন এসে বলছেন গণতন্ত্র নেই। এখন বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, বিদেশিদের অনুরোধ করছেন। বিদেশিরা কি আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কখনোই না, এটা বাংলাদেশ।’
সেমিনারের শুরুতে বক্তব্য দেন নবগঠিত সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ’ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। কিন্তু নানা কারণে এই অঞ্চলে এখন কিছু সংকট তৈরি হচ্ছে। আমাদের মনে হয়েছে, এই অঞ্চলে যেসব জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে, এই সংকট মোকাবিলায় তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা উচিত। এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই আমরা সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা এই সংগঠনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই।’
এর আগে মন্ত্রী সিসিআরএসবিডি সংগঠনটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সংগঠনটির উদ্যোগে এ ধরনের সভা, সেমিনার আরও বেশি বেশি করার আহ্বান জানান।
পরে সেমিনারে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সংকট ও উত্তরণ’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক। এরপর সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজের সঞ্চালনায় সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় প্যানেল স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া পদক বিজয়ী শোভা রানী ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ কিউ থিন অং, খাগড়াছড়ি মং সার্কেল প্রধান রাজ কুমার তইন ইনফ্রু মারমা, এফবিসিসিআই পরিচালক মুলান মাহবুব, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম ও শিক্ষাবিদ সমীর দত্ত চাকমা।