× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মৎস্যসম্পদ

ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা

এম এ হান্নান, বাউফল (পটুয়াখালী)

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ০৯:২৯ এএম

পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের জাল ফেলছেন চেলেরা। প্রবা ফটো

পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের জাল ফেলছেন চেলেরা। প্রবা ফটো

পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে একসময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ত। কিন্তু কয়েক বছর হলো, জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এ বছর ভরা মৌসুমেও অনেকটা খালি হাতে নদী থেকে ফিরতে হচ্ছে তাদের। টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে গিয়ে খালি হাতে ফিরে হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাগর মোহনায় ডুবোচরে বাধা পেয়ে ইলিশ গতিপথ পাল্টাচ্ছে। এ কারণে সাগরে ইলিশ ধরা পড়লেও তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরঙ্গ নদীতে প্রত্যাশা অনুযায়ী ইলিশের দেখা মিলছে না। 

ভোলার উত্তরে মেঘনা নদী থেকে উৎপত্তি তেঁতুলিয়ার। নদীটির দৈঘ্য প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। বাকেরগঞ্জের অংশ হয়ে, বাউফলের ধুলিয়া, নিমদী, কালাইয়া দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দশমিনা উপজেলার রনগোপালদি নামক স্থানে বুড়াগৌরঙ্গ নামে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। আবার ভোলার নাজিরপুর, চরকলমী, চরকুকরি, ডালচর হয়েও সাগরে মিশেছে। তেঁতুলিয়া নদীকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত করেছে মৎস্য বিভাগ। কয়েক বছর আগেও তেঁতুলিয়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ত। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলিশ সাধারণত সোজা পথে ঝাঁক বেঁধে চলে। চলার পথে বাধা পেলে সেখান থেকে আবার ফিরে যায়। পটুয়াখালী ও ভোলার সাগর মোহনায় দীর্ঘ ডুবোচর ও নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় ইলিশ চলার পথে বাধপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে ইলিশ আর নদীতে প্রবেশ করে না। এ কারণে ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত রুপালি ইলিশ। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অনাবৃষ্টি, বর্জ্য থেকে পানিদূষণ, নির্বিচারে জাটকা নিধনও ইলিশের দেখা না মেলার অন্যতম কারণ। 

তেঁতুলিয়া নদী ঘুরে দেখা যায়, চর রুস্তুম থেকে দশমিনার বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় অসংখ্য চর জেগেছে। দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। আঁকাবাঁকা হয়ে পড়েছে নদীর গতিপথ। শুধু তেঁতুলিয়া নয়, সাগর মোহনার রামনাবাদ, আগুনমুখা, আন্ধারমানিক ও বলেশ্বর নদেও অসংখ্য ডুবোচর পড়েছে। ফলে পরিবর্তন এসেছে নদীর গতিপথে। 

জেলেরা বলছেন, সাগর মোহনায় কিছু অসাধু জেলে ছোট ফাঁসের বিভিন্ন জাল পেতে রাখেন। এতে ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছ আটকা পড়ে। এ কারণে নদীতে পানিপ্রবাহও কমে যায়। সৃষ্টি হয় ডুবোচরের। এতে ইলিশের প্রবেশ ও প্রজননে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীতে ইলিশ না থাকায় পরিবার ও ঋণের দায় নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তেঁতুলিয়াপারের প্রায় পাঁচ হাজার জেলে। চর মিয়াজানের জেলে মো. আলতাফ মাঝি বলেন, ‘বর্ষায় নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়, যা বিক্রি করে এনজিওর ঋণ, আড়তদারের দাদন পরিশোধ করি। মৌসুম শেষে আবার ধারদেনা করে চলি। এ বছর নদীতে ইলিশ নেই। ইলিশ না থাকায় আমরা ভালো নেই।’ 

কালাইয়ার মৎস্য ব্যবসায়ী মো. জুয়েল মাহমুদ মৃধা বলেন, ‘ইলিশ মৌসুমের আগে জেলেদের জাল, নৌকা তৈরি ও মেরামত করতে টাকা দিয়েছি। ইলিশ ধরে তাদের সংসার চালাবে। আমাদেরও মাছ দেবে। তবে নদীতে মাছ না থাকায় ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে।’ 

ভরা মৌসুমে ইলিশ না মেলার বিষয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লোকমান আলী বলেন, সাগর মোহনায় ডুবোচরের বিষয় নিয়ে আমরাও ভাবছি। ইলিশ যখন মাইগ্রেড করে সাগর থেকে নদীতে আসে, তখন তার একটি নির্দিষ্ট গভীরতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাগর থেকে নদীতে ঢুকতে মোহনায় যখন পর্যাপ্ত গভীরতা পায় না, তখন তারা আবার সাগরে ফিরে যায়। এটা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ড্রেজিং। তবে আমাদের দেশে সাগর মোহনা ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা চালু হয়নি। 

এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, বেহুন্দি জাল, চরঘেরা জাল, নদীতে ঝোপ দিয়ে মাছ শিকারের কারণে নাব্য সংকট দেখা দেয়। এসব বন্ধে আমাদের অভিযান চলছে। আর সাগর মোহনায় ডুবোচরের কারণে যে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, তার সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা