স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গুলি
কুষ্টিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১৮:০৪ পিএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১৮:২৭ পিএম
আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয় প্রামাণিক। প্রবা ফটো
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জাসদের যুবজোট নেতার গুলিতে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সঞ্জয় প্রামানিক ও দুই কর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকালে আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার স্ত্রী বিথী রানী বাদী হয়ে জাসদ যুবজোটের জেলা ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান শোভনসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে ভেড়ামারা থানায় এই মামলা করেন।
এর আগে হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে ঘটনার দিন রাতে শোভনকে আটক করে পুলিশ। পরদিন শোভনকে ৫৪ ধারায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, থানায় মামলা করেছেন আহত নেতার স্ত্রী। প্রধান আসামি শোভনকে ৫৪ ধারায় কারাগারে পাঠানো হলেও তিনি এখন আসামি। এ ছাড়া মামলার এজাহারভুক্ত আরেক আসামি মমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে আহত সঞ্জয়কে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার দুপুরে ঢাকা নিয়ে গেছে তার পরিবার। বেলা ৩টার দিকে ফোনে তার ছোট ভাই সম্পদ প্রামানিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভাইয়ের চিকিৎসাসেবা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট না। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিচ্ছেন। এক্স-রে রিপোর্টে পায়ের ভেতরে গুলি আছে কি না, তা নিয়েও চিকিৎসকরা কিছু বলেন না।
এর আগে আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয় প্রামানিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, স্থানীয় একটি মন্দিরের কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শোভন তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে শহরের গোডাউন মোড়ে শোভন ও তার লোকজন তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপ দেয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা বেলাল ও শ্যামলকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।
সঞ্জয় প্রামানিক দাবি করেন, শোভন তার পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছে। তিনি পড়ে গেলে আবারও গুলি করে। এখনও তার পায়ে ব্যথা রয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার পায়ের এক্স-রে করা হয়েছে। রিপোর্টে পায়ের ভেতরে গুলির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে ধারণা করেছিলেন ছররা গুলি লাগতে পারে।
রোগী ঢাকায় নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি (সঞ্জয় প্রামানিক) সুস্থ আছেন। আমরা তাকে রেফার্ড করিনি। তারা স্বেচ্ছায় যেতে পারে।’
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভেড়ামারা শহরের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় কুষ্টিয়া-দৌলতপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভও করে তারা। এ ছাড়া জাসদ যুবজোট নেতা শোভনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকালে জরুরি সভা করেছে জাসদ।
ভেড়ামারা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আকরাম হোসেন শামীম বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার ওপর যুবজোট নেতার হামলার ঘটনায় তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। এরই অংশ হিসেবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছিলেন।
ভেড়ামারা রেল বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বৃহস্পতিবার এক ঘণ্টা বন্ধ রাখার পর নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে পুনরায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেন।
উপজেলা যুবজোটের সহসভাপতি ও পৌর মেয়র আনোয়ারুল কবির টুটুল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কারও ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে দলীয়ভাবে শরিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে, তা কাম্য না। এর দায় দল নেবে না। যাকে যুবজোট নেতা বলা হচ্ছে, তিনি আমাদের দলের সক্রিয় কেউ নন।
জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত সিংহ রায় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা জরুরি সভা করেছি। শোভনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। দুদিনের মধ্যে আবারও সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।