মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৫৩ পিএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ২০:১৮ পিএম
বাম পাশে টুপি মাথায় অভিযুক্ত কামাল হোসেন। প্রবা ফটো
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে তথ্য গোপন করে দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও সম্মানীর টাকা তুলছেন এক শ্রমিক লীগ নেতা। প্রায় দেড় বছর ধরে এ কাজ করে যাচ্ছেন মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বর ও ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. কামাল হোসেন। দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে বেতন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত কামাল।
ইউপি সদস্য হিসেবে প্রতি মাসে সরকারি কোষাগার থেকে কামাল সম্মানী নিচ্ছেন ৩ হাজার ৬০০ টাকা। অপরদিকে একই ইউনিয়নের মধ্য বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী পদে চাকরির বিপরীতে নিয়মিত হাজিরা দেখিয়ে প্রতি মাসে নিচ্ছেন ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা।
বিশারীঘাটা গ্রামের কামাল হোসেন ২০১৩ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী পদে চাকরি নেন। এর পরে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে মেম্বর নির্বাচিত হন। মেম্বর নির্বাচিত হওয়ার কিছু পর থেকেই লাইলী বেগম নামে এক নারী তার হয়ে বিদ্যালয়ে প্রক্সি দিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. কামাল হোসেন ২০০৮ সালে প্রথম ভোটার আইডি করেন। সেখানে তার নাম লেখা রয়েছে মো. কামাল হোসেন, পিতা নূর মোহাম্মদ। জন্ম ১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারি।
এরপর বিদ্যালয়ে দপ্তরি পদে চাকরি নিতে প্রায় ১০ বছর বয়স কমিয়ে ২০১৩ সালে নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন দেখিয়ে আরও একটি ভোটার আইডি করেন। সেখানে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১৯৯৪ সালের ১৫ জুলাই। নাম লেখা হয়েছে মো. কামাল হোসেন খান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন সার্ভার দেখে বলেন, ’কামালের দুটি ভোটার আইডি সচল আছে। যার প্রথমটির নম্বর ০১১০৫২৮৩৮১০৫ (২০০৮)। দ্বিতীয়টির নম্বর ০১১০৫২০০০১৭৪ (২০১৩)। জন্ম তারিখ, নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে।’
দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও সম্মানী গ্রহণের বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সব তথ্য দিয়েছি। তখন তো আমার নমিনেশন ফর্ম বাতিল করা হয়নি। আমি নিয়মিত স্কুলে চাকরি করি। পরিষদেও যাই। আমার অনুপস্থিতিতে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করেন। এতে কোনো সমস্যা হয় না।’
মধ্য বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার জানান, কামাল মাঝেমধ্যে থাকেন না। তখন তার পরিবর্তে লাইলী নামে এক নারী দায়িত্ব পালন করেন।
প্রক্সির বিষয়ে লাইলী বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি চা-বিস্কুট আনার কথা বলে পালিয়ে যান।
মোরেলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব প্রভাংশু রায় বলেন, কামাল হোসেন খান এ পরিষদের মেম্বর এটুকুই জানি। তিনি পরিষদের সব কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নেন। অন্য কোথাও চাকরি করেন কি না, জানেন না তিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, কামাল খান একটি বিদ্যালয়ে চাকরি করেন বলে জানি। কিন্তু আর্থিক সুবিধা নেন কিনা তা জানি না।
উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন বাদশা বলেন, কামাল ২০১৫ সাল থেকে মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের করনিক দিপক কুমার দেবনাথ জানান, কামাল হোসেন মেম্বর হিসেবে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সরকারি অংশের সম্মানীর টাকা নিয়েছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ঘটনাটি কেউ জানাননি। শোনার পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তারেক সুলতান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিদ্যালয়ের দপ্তরী ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর হিসেবে দুটি পদে একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।