× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার সান্নিধ্য পেলেন এলি

এহসানুল হক সুমন, রংপুর

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ২০:১২ পিএম

আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ২০:৩৫ পিএম

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করলেন জেনিফার এলি। প্রবা ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করলেন জেনিফার এলি। প্রবা ফটো

‘ছোট্ট বেলায় বঙ্গবন্ধুর স্নেহ পেয়েছিলাম। জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্য পাওয়া। সেটি ২ আগস্ট পেয়েছি। রংপুর সার্কিট হাউসের সিঁড়িতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলো। তিনি আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি নাম বলতেই তিনি বললেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এই ছবিটা তোমার। আমি জানি তোমার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দেখা হয়েছিল। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বঙ্গবন্ধুর মতো মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। জীবনের বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্ত পেয়ে আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমার থুতনি ধরে কান্না থামাতে বললেন। আমার পরিবারের খোঁজ নিলেন এবং আমার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর কথা শুনে সহানুভূতি জানালেন।’

শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকালে রংপুর নগরীর কামাল কাছনায় নিজ বাসভবনে কথাগুলো বলছিলেন জেনিফার এলি। জেনিফার এলি রংপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফের স্ত্রী। দুই কন্যার জননী এলি বলেন, ’আমি বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোঁয়া পেয়েছিলাম। তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল। আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার এ চাওয়া ব্যক্ত করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী রংপুরে আসছেন শুনে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম এবং ভেবেছিলাম যদি দেখা করা যায়! বিষয়টি আমি বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, সাবেক জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন ও আসিব আহসানকে জানিয়েছিলাম। ১ আগস্ট রাতে ডিসি আমাকে বললেন, করোনা পরীক্ষা করতে। আমি রাতে করোনা পরীক্ষা করলাম। তিনি সার্কিট হাউসে ঢোকার জন্য পাসের ব্যবস্থা করেছিলেন।’

২ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ’ওই দিন রংপুর জিলা স্কুলমাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ছিল। জনসভার মিছিলে আসা মানুষের কারণে আমার বাড়ির সামনের রাস্তা ভরে যায়। আমি দুপুর ১২টার দিকে বাড়ি থেকে সার্কিট হাউসের উদ্দেশে বের হই। সাতমাথায় যেতেই ট্রেনের কারণে আটকা পড়ি। এরপর রিকশায় কেরামতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত যেতে পেরেছিলাম। ঠিক এমন সময় এনডিসি ফোন করে জানালেন দ্রুত আসতে। এরই মধ্যে আমি দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার কেরামতিয়া স্কুলের ওপর দিয়ে চলে গেল। এরপর জনসভায় যোগ দিতে আসা মানুষের বাস, মাইক্রো, ট্রাকের কারণে রিকশা আর যেতে পারল না। আমি রিকশা থেকে নেমে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। সেই সময় রাজশাহী থেকে আসা এক যুবককে তার মোটরসাইকেলে সার্কিট হাউস পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলাম। চারদিকে ভিড়, আমি দুই হাত দিয়ে মানুষকে সরিয়ে এগিয়ে চললাম। মনে মনে ভাবছিলামবঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য পুলিশ, মানুষের ভিড় ঠেলে যেতে পারলে, এখনও আমি পারব।’ 

জেনিফার এলি বলেন, ’সার্কিট হাউসের সামনে আসতেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা আমাকে থামিয়ে দেয়। আমি ডিসিকে ফোন করি। উনি তখন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের ফোন করলে তারা আমাকে সার্কিট হাউসের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেন। আমি যখন সার্কিট হাউসে পৌঁছি, তখন প্রধানমন্ত্রী মিটিং করছিলেন। আমি দোতলায় অপেক্ষা করছিলাম। যখনই শুনলাম প্রধানমন্ত্রী দোতলা থেকে নামবেন, তখন আমি সিঁড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রধানমন্ত্রীকে দেখে আমার গা কাঁপছিল। ভাবছিলাম সত্যি সত্যি কি প্রধানমন্ত্রীকে দেখলাম। আমি তাকে দেখামাত্রই সালাম দিলাম। পা ছুঁয়ে সালাম করতে গেলে তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে নেন। এ সময় হাতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার সেই ছবি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিই।’ 

এলি বলেন, ’আমার জীবনের বহুল কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পর্শ পেয়েছি। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ও গর্বের। আমি চাই প্রধানমন্ত্রী সুস্থ থেকে আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাক।’

জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ১১ মে রংপুর কালেক্টরেট মাঠে লক্ষাধিক মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দেয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে সেই দিন কালেক্টরেট মাঠে গিয়েছিলেন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জেনিফার এলি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। এরপর রংপুর সার্কিট হাউসে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে অটোগ্রাফ নিয়েছিলেন জেনিফার এলি। পুলিশের বাধা ও শিক্ষার্থীদের ভিড় ঠেলে সার্কিট হাউসের বারান্দায় বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলেন স্কুলছাত্রী এলি। বঙ্গবন্ধু পরম আদরে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু রংপুরে একাধিকবার এলেও জেনিফার এলির মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া ছবিটি বঙ্গবন্ধুর রংপুরের একমাত্র স্মৃতি। এদিকে এলির মাথায় হাত বোলানো প্রধানমন্ত্রীর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা ছবিগুলো তাদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর তার ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন জেনিফার এলি, রংপুর ১৯৭২ ও ২০২৩।

১৯৭২ সালের স্মৃতিচারণ করে এলি বলেন, ’’তখন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য স্কুল থেকে পালিয়ে কয়েক বান্ধবী মিলে সার্কিট হাউসে যাই। সেখানে পুলিশ ব্যারিকেড দিলে সার্কিট হাউসের দেয়াল টপকে নামতেই পুলিশ আবার বাধা দেয়। পরে আমরা দৌড়ে গিয়ে সার্কিট হাউসে ঢুকে পড়ি। এ সময় বারান্দা দিয়ে সাজেদা চৌধুরী হেঁটে আসছিলেন। আমাদের পরিচয় নেন এবং আমরা বঙ্গবন্ধুকে একনজর দেখতে এসেছি জেনে তিনি যে কক্ষে বঙ্গবন্ধু বসেছিলেন, সেটি দেখিয়ে সেখানে যেতে বলেন। সাজেদা চৌধুরীর কথামতো বঙ্গবন্ধুর রুমে ঢুকে পড়ি। তখন বঙ্গবন্ধু কোলবালিশে হেলান দিয়ে পাইপ হাতে সবার সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমরা ঢুকে এক পাশে দাঁড়াতেই তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কাকে চাও? আমরা বলি বঙ্গবন্ধুকে। তিনি রসিকতা করে বললেন, দেখো তো তোফায়েল বঙ্গবন্ধু কোথায়? 

আমি বললামআপনিই তো বঙ্গবন্ধু। তখন তিনি আমাদের তার কাছে ডাকলেন। আমি বললামআমরা আপনার অটোগ্রাফ নেব। তিনি বললেন, অটোগ্রাফ! অটোগ্রাফ কী? আমি বললাম, আপনার সিগনেচার। অথচ আমার কাছে তখন কোনো খাতা বা কাগজ ছিল না। আমি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি। তিনি তখন আমার ডান হাত টেনে হাতে লিখে দিলেন, শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধুর সেই স্মৃতি ধরে রাখতে আমি অনেক দিন হাত দিয়ে ভাত খাইনি। মা খাইয়ে দিতেন। কিন্তু সে স্মৃতি ধরে রাখতে পারিনি। এরপর সেখানে কে যেন বললেন, তোমরা এখন বাইরে যাও। বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছি। তখন সাজেদা চৌধুরী বললেন, বঙ্গবন্ধু সার্কিট হাউসের রুম থেকে বেরিয়ে এলে যেন স্লোগান দিই, আমরাও তেমনটিই করেছি। বঙ্গবন্ধু রুম থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ বলে আমরা স্লোগান দিতে শুরু করলাম। বঙ্গবন্ধুর হাতে ফুলের তোড়া ছিল। তিনি সেখান থেকে একটি লাল গোলাপ আমাকে ছুড়ে দিলেন। আমরা দৌড় দিয়ে বাইরে চলে আসি। তাঁর দেওয়া ফুল হাতে পেয়ে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই।’’

এলি বলেন, ’’আমি সার্কিট হাউসের দেয়ালের খাপ বেয়ে ওপরে উঠি। অন্যসব ছাত্রছাত্রীও ওঠার চেষ্টা করছিল। আমি তখন প্রাণপণে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছিলাম। ‘আমার নেতা তোমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব।’ আরও বিভিন্ন স্লোগান। উনি তখন হাসছিলেন ও জিলা স্কুলের ছাত্রদের উদ্দেশে বলছিলেন, ‘না তোরা পারলি না। এর সঙ্গে তোরা পারলি না।’ তিনি আমার মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে আদর করে বলছিলেন, ‘ঘেমে গেছিস তো। এবার থাম। আমাকে একটু বলতে দে।’ সবাইর উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তোমরা পড়াশোনা করো। তোমরা সবাই মানুষ হও। এবার তোমরা বাড়ি যাও, জয় বাংলা।’ আমার জীবনে এটিই শ্রেষ্ঠ স্মৃতি।’ 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা