শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ২০:৪৪ পিএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ২১:৩৮ পিএম
সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলন। প্রবা ফটো
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলনকে বালুবাহী ড্রাম্প ট্রাকের চাকায় পিষে হত্যা করা হয়েছে। রাস্তায় সাইড না দেওয়ায় বাকবিতণ্ডার জেরে তাকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে মিলনের পরিবার। পুলিশ ট্রাকটি আটক করলেও চালককে আটক করতে পারেনি।
কাপাসিয়া থানার ওসি এইচএম লুৎফুল কবীর বলেছেন, পরিবারের বর্ণনার সঙ্গে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় মিল রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, সাংবাদিক মিলন হয়তো ট্রাকচালকের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। এর জেরেই ট্রাকচালক এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন। এ ছাড়া সাংবাদিকের মোটরসাইকেলটি অক্ষত অবস্থায় রাস্তার পাশে দাঁড় করানো ছিল।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকালে কাপাসিয়ার কোট বাজালিয়া বাজারের পাশে ভাকোয়াদি-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মিলন (৫২) কাপাসিয়ার পাবুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুস সাঈদ শেখের ছেলে। তিনি দৈনিক করতোয়া ও দৈনিক ভোরের দর্পণের গাজীপুর প্রতিনিধি এবং সাপ্তাহিক গাজীপুর দর্পণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বৈশাখী টেলিভিশন, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক দিনকালে কাজ করেছেন। তিনি কাপাসিয়া প্রেস ক্লাবের তিনবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং কাপাসিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নিহতের ভাই কামাল হোসেন বলেন, ভাইকে ট্রাকচাপা দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। মিলন শুক্রবার সকালে জেলা শহর জয়দেবপুরের বাসা থেকে মোটরসাইকেলে কাপাসিয়ার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। সোয়া ১০টার দিকে ভাকোয়াদি-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়কের কোটবাজালিয়া বাজার এলাকায় পৌঁছেন। সরু ওই সড়ক দিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া গতির বালুভর্তি ড্রাম্প ট্রাক মোটরসাইকেলকে সাইড না দিয়ে ওভারটেক করতে চাইলে মিলন আত্মরক্ষার্থে সড়কের বাইরে চলে যান। পরে মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে রেখে ট্রাকচালকের সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে যান। এ সময় চালকের সঙ্গে কথা বলার সময় দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ট্রাকচালক ক্ষিপ্ত হয়ে মিলনের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দেয় এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে ট্রাকটিকে দেহের ওপর দিয়ে সামনে ও পেছনে নিয়ে তাকে পিষ্ট করে। এতে মিলনের একটি হাত ও পা দেহ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয় এবং কোমর থেকে শরীরের নিচের অংশ প্রায় আলাদা হয়ে যায়। ঘটনার পরই চালক ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড। সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা নিহতের মোটরসাইকেলটি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে কাপাসিয়া থানা পুলিশ। শীতলক্ষ্যা নদীর অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি এই হত্যা ঘটনার বিচার চাই।’
কাপাসিয়া থানার ওসি এইচএম লুৎফুল কবীর জানান, লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ড্রাম্প ট্রাক আটক করা গেলেও চালক পালিয়ে গেছে। চালক এবং মালিককে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ঘটনায় গাজীপুরে সাংবাদিকসহ সব মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মিলনের নিহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী শফিকুল আলম, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খান, জেলা পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান আরিফ, গাজীপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক মাসুদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান প্রমুখ। তারা এ ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ ছাড়া শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দলটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, মঞ্জুর হোসেন মিলন সাংবাদিকতা জীবনে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।
বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মিলন অসুস্থ স্ত্রী, দুই কন্যা, মা ও ভাই-বোন রেখে গেছেন।