নেত্রকোণা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ২১:২৬ পিএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ২১:৫৬ পিএম
হাঁস-মুরগি ও ছাগলের সঙ্গে খাবার খাচ্ছে শেয়াল। প্রবা ফটো
শেয়ালকে সাধারণত হাঁস-মুরগি শিকারি প্রাণী হিসেবে জানে সবাই। কিন্তু এই প্রাণীটি যদি হাঁস-মুরগির সঙ্গে বেড়ে ওঠে, তাহলে সেটি আবাক করার মতোই বিষয়। এমনি ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুড়া ইউনিয়নের নয়নকান্দি গ্রামে। ওই গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হকের বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও ছাগলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে একটি শেয়াল।
তবে শেয়ালটি বেকায়দায় পড়ে নয়, নিজ ইচ্ছেতেই অনেকগুলো হাঁস-মুরগি ও ছাগলের সঙ্গে বেড়ে উঠছে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর উৎসুক জনতা ওই বাড়িতে গিয়ে ভিড় করছেন। এর মধ্যে আজিজুলের বাড়িটি এলাকায় ’শেয়াল বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।
স্থানীয়রা জানায়, আজিজুল হক তার বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও ছাগলের সঙ্গে একটি শেয়ালও পরম যত্নে লালন-পালন করছেন । তবে এসব পশুপাখি লালন-পালনের মূল দায়িত্বে আছেন আজিজুলের স্ত্রী সুমা আক্তার। গৃহপালিত শেয়ালটির নাম দিয়েছেন তারা লালু।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শেয়ালটি বাড়ির পাশের একটি টিলায় বসে আছে। উঠানে ১২টি ছাগল ও বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগি রয়েছে। সুমা আক্তার একটি পাত্রে খাবার দিলে হাঁস-মুরগি ও শেয়াল একই সঙ্গে ওই পাত্রে খাবার খাচ্ছে। আর ছাগলগুলো তাদের চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে।
সুমা আক্তার জানান, দেড় বছর আগে তার স্বামী আজিজুল হক নাজিরপুর ইউনিয়নের লোহারগাঁও এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে দেখেন একটি জলাশয়ে মাছ ধরছিলেন কয়েকজন আদিবাসী নারী। এ সময় তারা পাশের একটি জঙ্গলে তিনটি শেয়ালের বাচ্চা দেখতে পান। তখন তারা এগিয়ে গিয়ে শেয়ালগুলোকে উদ্ধার করেন। পরে তাদের কাছ থেকে আজিজুল হক একটি শেয়াল চেয়ে নিয়ে আসেন। তখন শেয়ালটির আনুমানিক বয়স ছিল তিন মাস।
তিনি আরও জানান, বাড়িতে আনার পর শেয়ালটিকে কী খাওয়াব কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরে আমি একটি বোতলে দুধ ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করি। প্রথম দিন ব্যর্থ হলেও পরদিন থেকে প্রায় এক মাস দুধ খাওয়ানো হয়। তারপর থেকে শেয়ালটি সব ধরনের খাবার খায়। বর্তমানে শিয়ালটির বয়স প্রায় দুই বছর।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আকবর আলী বলেন, সকালে শেয়াল, ছাগল, হাঁস ও মুরগিগুলো ছেড়ে দেওয়ার পর তারা বাড়ির পাশে একটি টিলায় চলে যায়। দিন শেষে সন্ধ্যার আগেই শেয়ালটি অন্যগুলোকে তাড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। এটি দেখে মনে হয় যেন শেয়ালটি মালিকের আদেশ পালন করছে। তবে প্রতিবেশীদের পশুপাখি শিকার ও কামড়ানো এ ধরনের সমস্যা করে না শেয়ালটি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন আনোয়ার পারভেজ বলেন, ’আমরা জানি শেয়াল হচ্ছে মাংসাশী প্রাণী এবং যেসব প্রাণীর জলাতঙ্ক বা রাবিশ (জুনোটিক রোগ) হয় বা জীবাণু বহন করে, তাদের মধ্যে শেয়াল অন্যতম। সেক্ষেত্রে জলাতঙ্ক টিকা শেয়াল ও তার পালনকারী দুজনকেই নেওয়া উচিত। শেয়ালের প্রধান খাবার প্রাণীর মাংস, খরগোশ, ইঁদুর, টিকটিকি, মুরগি, হাঁস ইত্যাদি।’