× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কালিয়াকৈর রেঞ্জ

বনভূমি দখল করে অসাধুদের ‘জমিদারি’

সেলিম রানা, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩ ১০:০৯ এএম

আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৩ ১০:১৩ এএম

গাজীপুরের কালিয়াকৈর রেঞ্জ ভাওয়াল গড়ের কিছু অংশ দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা। প্রবা ফটো

গাজীপুরের কালিয়াকৈর রেঞ্জ ভাওয়াল গড়ের কিছু অংশ দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা। প্রবা ফটো

গাজীপুরের কালিয়াকৈর রেঞ্জ ভাওয়াল গড়ের অংশ। এ বনে দখলদারদের দৌরাত্ম্যে অপরিকল্পিতভাবে গাছ উজাড় করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে বন বিভাগের এই ভূমি। রাতের আঁধারে গাছ কেটে আবাসন গড়ে তোলা হচ্ছে। ঘর ও দোকান তুলে দেওয়া হচ্ছে ভাড়া। ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ। এভাবে প্রতি মাসে দখলদাররা কোটি টাকা ভাড়া তুলছে।

কালিয়াকৈর রেঞ্জে সরকারি হিসাবে সাড়ে ২৯ হাজার একর বনভূমি থাকলেও বাস্তবে এর পরিধি দিন দিন কমছে। বন উজাড় করে তৈরি করছে আঞ্চলিক সড়ক। নির্মাণ হচ্ছে কাঁচা-পাকা বাণিজ্যিক ভবন। বিশেষ করে কালিয়াকৈর রেঞ্জের চন্দ্রা বিটের মাটিকাটা এলাকার বনাঞ্চলে এক দশক আগেও পশুপাখির অভয়াশ্রম ছিল। অথচ বনের ওই গাছগুলো রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মেরে ফেলা হয়েছে। অসাধু বন কর্মকর্তা ও দালালদের সহযোগিতায় সেখানে দোকান ও বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব স্থাপনা বিভিন্ন মূল্যের স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তিপত্র করে মাসিক ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। দালালদের সহযোগিতায় পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিদ্যুৎ দিচ্ছে। কিছু কিছু বাসাবাড়িতে রয়েছে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বৈধ সংযোগ।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা থেকে মাটিকাটা পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এই সড়কের দুপাশে বন উজাড় করে দোকান নির্মাণ করেছে বনভূমি দখলে নেওয়া ওই সব ব্যক্তি। স্থানীয় বন কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তাব করলেও অজানা কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। 

সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রস্তাব বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়। তবে তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। কয়েক বছর আগেও দুইবার অবৈধ দখল উচ্ছেদের বিভিন্ন প্রক্রিয়া শুরু করে হয়েছিল। এর আগে একবার বিট অফিসার অবৈধ দখলদারদের মৌখিকভাবে নোটিস দিলেও পরে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। আবারও বিট কর্মকর্তা ও তার সহকারীদের নিয়ে নতুন করে মৌখিক নোটিস ও সরেজমিনে দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এরপর আবার অজানা কারণে থেমে যায় উচ্ছেদ কার্যক্রম। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কিছু লোক জানান, বনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসন উচ্ছেদে আগ্রহী নয়। অপরদিকে উচ্ছেদের কথা বলে বন কর্মকর্তা ও দালালরা বিভিন্ন সময়ে সুবিধা নিয়ে আসছে। কয়েক মাস আগে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বন বিভাগের জমির দখলদারী নিয়ে সংবাদ করলে সেই স্থানটিতে উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের পর বিভিন্ন সময় ভাড়াটেদের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, চন্দ্রা বিটের এপেক্স হোল্ডিং ও ফারইস্ট কারখানা থেকে রেলগেট পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কের দুপাশে বন বিভাগের গাছ নিধন করে ৫ সহস্রাধিক দোকান ও ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তার পাশে ৮০ থেকে ১০০ স্কয়ার ফুট কাঁচা বা আধা পাকা দোকানের অবস্থান বুঝে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জামানত দিয়ে মাসিক ৬ থেকে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই স্থানটি শুধু দখল এককালীন কিনতে চাইলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা গুনতে হয়। এরপর ঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন সময় দালালদের মাধ্যমে অর্থ নিয়ে থাকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। একেকজন দখলদারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শতাধিক দোকান। আর মাটিকাটা এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে থাকা দখলদারের সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। তাদের ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না স্থানীয় লোকজন। 

প্রতিনিয়তই এই এলাকার রাস্তাগুলোতে যানবাহনের জটলা লেগেই যায়। যার কারণে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার দুপাশে অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। 

স্থানীয়রা জানান, রাস্তার পাশ দখলের পাশাপাশি ওই পুরো এলাকার বনের জমি প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি বিভিন্নভাবে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তি করে বিক্রি করেছে। প্রতিটি প্লটের জন্য ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা অগ্রিম জামানত নেওয়া হয়। দোকান ছেড়ে চলে গেলে অনেক সময় জামানতের টাকা ফেরত দিতে নানা টালবাহানা করে। এমনকি ভয়ভীতি দেখায়। প্রতিটি প্লটের জন্য ভাড়া বাবদ ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় থেকে দখলদারি করে আসছে। তাদের একেকজনের নামে বন বিভাগের একাধিক প্লট বরাদ্দ রয়েছে। তারাই এই দখলদারির সঙ্গে জড়িত। তারাই বাড়িঘর ও দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করছে। বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই বিষয়ে অবগত থাকলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। বনের কর্মকর্তাদেরও তাদের অফিস ও দোকানে এসে আড্ডা দিতে দেখা যায়।

দখলদার সোহরাব হোসেন জানান, ‘এগুলো আমি একা নিচ্ছি না। এখানে প্রায় দুই হাজার দোকান আছে। যে যে রকমভাবে দখল করেছে সে অনুপাতে একেকজনে ভাড়া নিচ্ছে।’ 

গাজীপুরের সহকারী বন সংরক্ষক রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বনের জমি অবৈধভাবে দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে আসছে একটি চক্র। বর্তমানে নতুন করে এরা এসব স্থাপনা নির্মাণ করতে পারছে না। অবৈধ দখলের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। 

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, চন্দ্রা বিটে বেশকিছু স্থানে অবৈধ দখলদাররা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সরকারি বিধিমোতাবেক উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা