তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩ ১২:৩৯ পিএম
অযত্ন আর অবহেলায় যশোরের চৌগাছা নীলকুঠি এখন ভগ্নপ্রায়
যশোরের চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদের তীরে ইংরেজ শাসনামলে স্থাপিত নীলকুঠি রক্তাক্ত ইতিহাস ধারণ করে আজও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এখন আর নেই নীল চাষ। কিন্ত ইংরেজদের অত্যাচারের স্মৃতিচিহ্ন আজও মনে নাড়া দিয়ে যায়।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কালের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে নীলকুঠির ইতিহাস। হাবিবুল্লাহ নামে স্থানীয় এক ভদ্রলোক ১৯৪৫ সালে বন্দোবস্ত নিয়ে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে তারই বংশধর কাজী আবদুল বাতেন বাস করেন এখানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নীলকুঠির জৌলুস আর নেই। ৬ একর জমির ওপর কপোতাক্ষ নদের তীরে দোতলাবিশিষ্ট জীর্ণ ভবনের এক পাশে ছয় সন্তান নিয়ে বাস করেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি শিক্ষক আবদুল বাতেন। সন্তানদের সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত।
তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যশোর জেলায় সর্বপ্রথম নীল কারখানা স্থাপন করেন মিস্টার বন্ড। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এ অঞ্চলের প্রধান কার্যালয় ছিল চৌগাছার এই নীলকুঠি। এ জনপদ ছিল নীল বিদ্রোহের সূতিকাগার। ১৯৪৫ সালের দিকে এলাকার প্রভাবশালীরা নীলকুঠির বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যান। ১৯৪৫ সালে তার দাদা মাওলানা হাবিবুল্লাহ এক বিহারির কাছ থেকে নীলকুঠির বন্দোবস্ত নেন। ১৯৬২ সালে এ জমি তার বাবা মাওলানা আবদুল্লাহিল কাফীর নামে রেকর্ড হয়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চলের কৃষককে বাধ্য করা হতো নীল চাষে। অন্যায় আইন চাপিয়ে দেওয়ার কারণে নীল চাষ কৃষকের পক্ষে লাভজনক ছিল না। প্রতি বিঘায় একজন চাষির নীল চাষে খরচ হতো ২ টাকা ১৪-১৫ আনা। একপর্যায়ে নীলকরদের অত্যাচার বেড়ে যায়। এ নিয়ে ক্ষোভ থেকে বিদ্রোহে রূপ নিয়ে শুরু হয় আন্দোলন। মূলত ১৮৫৮ সালে চৌগাছা থেকেই বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটে। চৌগাছার অকুতোভয় চাষি দিগম্বর বিশ্বাস ও তার সহোদর পীতাম্বর বিশ্বাসের নেতৃত্বে শুরু হয় নীল বিদ্রোহ। সেই বিদ্রোহের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে ভারতবর্ষে।
দীর্ঘমেয়াদি বিদ্রোহের ফলে ১৯০৫ সালে ভারতবর্ষ থেকে নীল চাষ উঠে যায়। জানা যায়, দিগম্বর ও পীতাম্বরের বাড়ি ছিল চৌগাছার কংশারীপুর গ্রামে। দুই সহোদর কোথায় মারা যান তা জানা যায়নি। তবে উপজেলার গরীবপুর গ্রামের পাশে তাদের সমাধিস্থ করা হয়েছে এমন তথ্য প্রচলিত আছে।
শুধু চৌগাছার নীলকুঠি নয়, ইংরেজ এ অঞ্চলে কাটগড়া, খালিশপুর, গুয়াতলি, কাদবিলা, ইলেশমারীতে আরও কয়েকটি ছোট ছোট নীলকুঠি স্থাপন করেছিল। যেগুলোর চিহ্ন এখন আর চোখে পড়ে না।
কাজী আবদুল বাতেনের কাছে নীলকুঠি সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাইলে নিজে সংস্কার করতে পারি। কিন্তু নীলকুঠি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থী আসেন। যদি আমি সংস্কার করি তাহলে কাঠামোগত পরিবর্তন হতে পারে। আমি চাই না এটি কাঠামোগত পরিবর্তন হোক। ইতিহাস পরিবর্তন করতে চাই না বলে এটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে পড়ে রয়েছে।’ সরকার যদি কুঠিটি সংস্কার করতে চায়, সেক্ষেত্রে মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে সংস্কারের পক্ষে মত দেন। এছাড়াও তার পরিবারের বসবাসের জন্য ব্যবস্থা করারও দাবী জানান।