× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চীন থেকে এসেই জঙ্গিবাদে জড়ান প্রকৌশলী মেহেদী

মাদারীপুর প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ২২:৩২ পিএম

মেহেদী হাসান ওরফে মুন্না। প্রবা ফটো

মেহেদী হাসান ওরফে মুন্না। প্রবা ফটো

চীন থেকে পড়ালেখা শেষ করে দেশে এসে মা-বাবার সঙ্গে মাত্র ছয় দিন ছিলেন প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ওরফে মুন্না (২৩)। এরপর হঠাৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। গত ১২ আগস্ট তাকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় হতবাক তার পরিবার ও এলাকার লোকজন। আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না মেধাবী ছাত্রটি জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন।

মেহেদীর বাবা রেজাউল করিমের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্বচিড়াইপাড়া এলাকায়। তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের গাড়িচালক। চাকরির সুবিধার্থে স্ত্রী দিনারা মমতাজকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন শহরের ইটেরপুল এলাকায়। এ দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে বড় মেহেদী। ছোট ছেলে ঢাকার বাংলা কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বড় ছেলে মেহেদীর এমন দেশবিরোধী কাণ্ডে দিশেহারা রেজাউল-মমতাজ দম্পতি। দুজনই সন্তানকে আর ফেরাতে চান না। 

শুক্রবার ( ১৮ আগস্ট) সকালে ইটেরপুল এলাকায় দেখা যায়, মেহেদীর মা মমতাজ ঘরে শয্যাশায়ী। বাবা সোফায় বসে দুশ্চিন্তায় মগ্ন। মেহেদীর কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মমতাজ। বলতে থাকেন তাদের কষ্টের হাজারো কথা।

মমতাজ বলেন, ‘আমার ছেলেটা চীন থেকে দেশে আসছে, বিয়া করামু। মেয়েও দেখেছি। কত স্বপ্ন আর আশা ছিল বুকে। সব শ্যাষ হইয়া গেল। ও যে কাজটা করেছে, তার জন্যে কারও কাছে মুখ দেখানোর জায়গা নাই। আমার ছেলেডা আমাদের অপরাধী বানাইয়া দিছে। হায় আল্লাহ, এমন ছেলে যেন আর কোনো মায়ের পেটে জন্ম না হয়।’

পরিবার সূত্র জানায়, রেজাউলের চাকরিজীবনের বড় একটি সময় কেটেছে ঢাকায়। বড় ছেলে মেহেদীর জন্মস্থানও ঢাকায়। এ কারণে মেহেদীর ঢাকায় বেড়ে ওঠা। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করেন ঢাকায়। ২০১৫ সালে খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে পাস করেন। পরে ২০১৭ সালে ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজ থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ৯২ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর স্কলারশিপ নিয়ে চীনের ইয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে চলতি বছরই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভালো ফল নিয়ে স্নাতক পাস করেন। পড়ালেখা শেষে গত ৬ জুলাই দেশে আসেন মেহেদী। বিমানবন্দর থেকে নেমে তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে খিলগাঁও যান। সেখান থেকে মেহেদীর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে চলে যান পাবনা। পরে গত ১১ জুলাই মেহেদী তার নিজ এলাকা মাদারীপুরে তার মা-বাবার কাছে আসেন। ছয় দিন মেহেদী তার মা-বাবার সঙ্গে কাটালেও হঠাৎ ১৭ জুলাই বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এরপর ঢাকাসহ নানা স্থানে খোঁজখবর নেওয়া হলেও মেহেদীর বাবা তার ছেলের কোনো সন্ধান পাননি। ছেলের সন্ধান চেয়ে ১০ আগস্ট মাদারীপুর সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।

ছেলে জঙ্গি দলের সদস্য হিসেবে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের খবরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন রেজাউল করিম। আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে বলেন, ‘অল্প টাকা বেতনে চাকরি করি। নিজের রক্ত পানি কইয়া বড় ছেলেডারে মানুষ করতে চেষ্টা করেছি। বড় ছেলেডার পড়ালেখা ভালো দেইখা, রাতদিন পরিশ্রম করে আয় করতাম। চীনে পাঠাইছি, পড়ালেখা শেষ কইরা দেশে আইসা ভালো চাকরি পাবে, আমাগো কষ্ট দূর হইবে। এমন কত আশা ছিল ওরে নিয়া। সব শ্যাষ।’

তিনি বলেন, ‘ছেলের সাফল্যে প্রতিটি বাবা গর্ব করেন। আমার ছেলে যখন ভালো রেজাল্ট করত, তখন সবাই ওর প্রশংসা করত। আমিও তখন আমার ছেলের জন্য গর্ববোধ করতাম। আনন্দে চোখের পানি ফেলতাম। আর এখন আমার ছেলেকে মৃত মনে করি। যে ছেলে দেশের জন্য ক্ষতিকর, খারাপ পথে চলে যায়, তাকে আর ফিরাতে চাই না। আইন ওর সর্বোচ্চ শাস্তি দিক।’

গত ১২ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকার একটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ৬ নারীসহ ১০ জনকে আটক করে। তাদের সঙ্গে তিন শিশুও ছিল। এদের মধ্যে একজন প্রকৌশলী মেহেদী। তারা ‘ইমাম মাহমুদের’ কাফেলা নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে জানিয়েছে সিটিটিসি। এ ঘটনার পর ১৫ আগস্ট একই এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে আরও ১৭ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা