দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২৯ পিএম
হারুন-অর রশিদ।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে নিজের জীবন দিয়ে যারা তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়েছিলেন, তাদের একজন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামের হারুন-অর রশিদের ছেলে মাহবুবুর রশিদ মাসুদ। মাহবুবুর রশিদের বাবা হারুন-অর রশিদ ও মা হাসিনা বেগম এখনও বেঁচে আছেন। শারীরিক নানা অসুস্থতা তাদের নিত্যসঙ্গী। আর মাহবুবুর রশিদের স্ত্রী ছেলেদের নিয়ে থাকেন ঢাকায়। বড় ছেলে আশিক বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং আর ছোট ছেলে রবিন ডাক্তারি পড়া শেষ করেছেন।
ফুলবাড়ী গ্রামে নিজ ঘরের বিছানায় বসে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা বলছিলেন বাবা হারুন-অর রশিদ ও মা হাসিনা বেগম। তারা জানান, তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো না। শরীরে নানা অসুখ। বয়সের ভারে হাসিনা বেগমের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে চলেছে। বয়োবৃদ্ধ হারুন-অর রশিদ প্রোস্টেট ক্যানসার নিয়ে জীবনসংগ্রাম করে চলেছেন। বাড়ি থেকে খুব একটা বের হন না। কারও সামনেও আসেন না। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকা আর বয়স্ক ভাতার টাকায় তাদের সংসার চলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে তার দরিদ্র পরিবার। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় ছেলেমেয়েরা ভালো চাকরি করেন। তবে বাবা-মায়ের খোঁজ না রাখায় ক্ষোভ রয়েছে নিজের সন্তানদের ওপর।
৮৬ বছরের হারুন-অর রশিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। মাহবুব তো চলেই গেছে আমাদের ছেড়ে। এক ছেলে, এক মেয়ে ও এক নাতি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় সরকারি চাকরি পেয়েছে। মাহবুবের স্ত্রী শামীমা আক্তার আছমা তার দুই ছেলে আশিক ও রবিনকে নিয়ে ঢাকায় থাকে। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং আর ছোট ছেলে ডাক্তারি পড়েছে শুনেছি। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তারাও খোঁজ রাখে না। এখন ছোট মেয়ে আবিদা কাছে থাকে। সে-ই আমাদের দেখাশোনা করে। মেয়েকে একটা ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারলে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।’
প্রতিবছর এই দিনটি (একুশে আগস্ট) এলে দোষীদের শাস্তির বিষয়ে নানা খবর শোনেন; মন খারাপ হয়। তবে মৃত্যুর আগে হলেও ছেলের হত্যাকারীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন দেখে যেতে চান এই দম্পতি। ছেলের মৃত্যুবার্ষিকী কীভাবে পালন করবেন, জানতে চাইলে হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘মৃত্যুবার্ষিকীতে মেয়েরা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।’
কথা হয় ছোট মেয়ে আবেদা সুলতানার সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় তিনিও খোকসা উপজেলা পরিষদে চাকরি করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আবেদা বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের দুই হাত ভরে দিয়েছেন। তার কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই। প্রতিবছর সামর্থ্য অনুযায়ী ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করি।’