চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৩০ পিএম
প্রতীকী ছবি
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, জমি দখল, টাকায় আদায়, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক হাঙ্গামা, নির্বাচনী সংঘাত, ঠিকাদারি ও ব্যক্তিগত বিরোধসহ সব কাজ করে দেয় ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে দিতে রীতিমতো চুক্তিও করে তারা। এদের মধ্যে অনেকেই জেলায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি বড় ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের কাছে এসব অপরাধীর চাহিদাও বেশ তুঙ্গে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বত্র দিনে দিনে বাড়ছে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের আধিপত্য। সম্প্রতি একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে এমনই এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সন্ধান পায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পৌর এলাকার আলীনগরে তারা আস্তানা গাড়লেও, জেলার সব এলাকাতেই ভাড়ায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে এ গোষ্ঠীর সদস্যরা। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে ভাড়াটে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পাঁচজনের নাম উঠে এসেছে। তারা হলোÑ আলীনগর মুন্সীপাড়ার মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে মোশারফ হোসেন বাবুল, মৃত হারেজ আলীর ছেলে মো. রতন, আলীনগর ভূতপুকুরের আবু বাক্কারের ছেলে মো. সাজু, মৃত আকতার আলীর ছেলে হযরত আলী, মোজাম্মেল হকের ছেলে মো. সাব্বির।
তদন্ত প্রতিবেদনে এই পাঁচজনের নাম উঠে এলেও প্রতিদিনের বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। এদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে থানায় মামলা আছে। এ ছাড়াও তারা অসামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার দায়ে গ্রাম্য সালিশের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। নেশার টাকা জোগান দিতে এরা রাতের আঁধারে বিভিন্ন মোড়ে ‘ছিনতাই চৌকি’ বসায়। অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখায়। ফলে জিম্মি মানুষগুলো তাদের সর্বস্ব হারায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২৪ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের লাখেরাজপাড়া থেকে মোশারফ হোসেন ও নুরুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আলীনগর মোসা হাজির বাগানে। সেখানে তাদের নির্যাতন চালিয়ে নগদ এক লাখ টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়াও ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার একটি চেক নেয় এই বাহিনী।
এ ঘটনায় মোশারফ হোসেন আমলি আদালত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে একটি মামলা করেন। মামলায় গোমস্তাপুর উপজেলার চকপুস্তমের মৃত আফাজ উদ্দীনের ছেলে তৌহিদুল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হুজরাপুর-পাঠানপাড়ার মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে জাকির হোসেনসহ অজ্ঞাত আরও চারজনকে বিবাদী করা হয়।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ২৪ মে আদালতে হাজিরা দিতে এসে ফিরে যাওয়ার সময় আসামিরা মোশারফ ও নুরুলকে লাখেরাজপাড়া কালেক্টরেট শিশু পার্কের সামনে থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা আলীনগরের মোসা হাজির আমবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে দুজনকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করা হয়। গলায়-বুকে ধারালো অস্ত্র ধরে ভয় দেখানো হয়। পরবর্তীকালে মোশারফের পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নগদ এক লাখ টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়াও ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার অঙ্ক উল্লেখ করে জনতা ব্যাংকের একটি চেক লিখে নেওয়া হয়। একই সময়ে তিন সেট ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় ভাড়াটে ওই বাহিনী।
আদালত বাদীর আরজি আমলে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটি তদন্ত করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মশিউর রহমান। তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাত আসামিদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোশারফ হোসেন বাবুল, মো. রতন, সাজু, হযরত আলী ও মো. সাব্বির এলাকায় একটি ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন মামলা আদালতে বিচারাধীন।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মোশারফ হোসেন বাবুলের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়, হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরসহ বিভিন্ন ধারায় এ মামলাগুলো করা হয়। রতনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তিনটি। চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরক আইনসহ বিভিন্ন অপরাধে করা হয় মামলা তিনটি। বাকিদের বিরুদ্ধেও থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মো. বাবুল উদ্দীন সরদার জানান, আদালতের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে। পরে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে উঠে আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা আদালতই সিদ্ধান্ত দেবেন।