ইয়াসমিন ট্র্যাজেডির ২৮ বছর
দিনাজপুর ও খানসামা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১১:০০ এএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১২:২২ পিএম
দিনাজপুর শহরের দশমাইল মোড়ে ইয়াসমিনের স্মৃতিসৌধ। প্রবা ফটো
আজ ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে (২৪ আগস্ট) পুলিশ হেফাজতে কিশোরী ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এতে নিহত হন সাতজন। তারপর থেকেই সারা দেশে এই দিনটি ‘ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে।
ইয়াসমিনকে স্মরণে রেখে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে দিনাজপুরের বিভিন্ন সংগঠন তার কবর জিয়ারত, দিনব্যাপী দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
জানা যায়, ঘটনার দিন ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাচ্ছিল ইয়াসমিন। রাতে তাকে দশমাইল মোড় এলাকায় এক চা দোকানির জিম্মায় নামিয়ে দেন বাসের সুপারভাইজার। কিছুক্ষণ পরই নৈশ টহল পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান সেখানে পৌঁছে ইয়াসমিনকে নানা প্রশ্ন করে। এক পর্যায়ে দিনাজপুর শহরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জোরপূর্বক তাকে পুলিশ ভ্যানে তুলে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
এ ঘটনায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষ। ২৭ আগস্ট কয়েক হাজার জনতার বিক্ষোভ মিছিলে নির্দ্বিধায় গুলি চালায় পুলিশ। এতে সামু, কাদের, সিরাজসহ সাতজন নিহত হন। আহত হন তিন শতাধিক মানুষ। ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যাসহ, বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট আদালত আলোচিত এ মামলার রায় দেন। এতে এএসআই ময়নুল ইসলাম, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও অমৃত লালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়।
ঘটনার ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বয়ে বেড়ান ইয়াসমিনের মা ফরিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘এত বছর পর আমাদের কথা আর কেউ মনে রাখেনি। আমার স্বামী কয়েল বিক্রি করে সংসার চালান। আমার একটি ছেলে আছে। সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। সরকার যদি একটা জমি বা খামারের বন্দোবস্ত করে দিত, তাহলে স্বামী-সন্তান নিয়ে একটু ভালোভাবে দিন কাটাতে পারতাম।’
ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বর্তমানে দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল। তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলন ছিল না। তাই এ আন্দোলন পুরো দিনাজপুরবাসীর আন্দোলনে পরিণত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আইন দিয়ে ধর্ষণ-হত্যা ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সামাজিক সচেতনতা। ইয়াসমিন আন্দোলনের যে লক্ষ্য তা আজও অর্জিত হয়নি। নারীরা এখনও নিরাপদ নয়।’
দিবসটি উপলক্ষে দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাচ ধারণ ও শোক র্যালিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।