× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হাওরে পানি নেই, মাছও নেই

সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১২:৪৩ পিএম

হাওরে জেলে নৌকাগুলো এভাবেই ঘাটে ঘাটে বসে আছে। ভাসান পানিতে মাছ না থাকায় হাওরের কয়েক হাজার জেলে মাছের ভরা মৌসুমে অলস সময় পাড় করছেন। প্রবা ফটো

হাওরে জেলে নৌকাগুলো এভাবেই ঘাটে ঘাটে বসে আছে। ভাসান পানিতে মাছ না থাকায় হাওরের কয়েক হাজার জেলে মাছের ভরা মৌসুমে অলস সময় পাড় করছেন। প্রবা ফটো

কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে পানি নেই। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মৎস্যসম্পদের ওপর। আশঙ্কাজনকহারে কমেছে মাছ। জেলে সম্প্রদায় ও স্থানীয়দের এক কথা ‘হাওরে পানি নেই, দেশীয় জাতের মাছও নেই।’ হাওরের কয়েক হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকেই করেছেন পেশা বদল। জীবন ও জীবিকার তাগিদে চলে যাচ্ছেন শহরে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওরের ছোট-বড় বাজারগুলোতে এখন দেশীয় মাছের আকাল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার পর মাছ এলে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা। ৫০০ টাকা কেজি দরের ছোট মাছ দেড় হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। তারপরও পানির অভাবে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি না ঘটায় আকারও ছোট। ফলে হাওরের মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় লোকজন। 

জেলেরা জানান, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে হাওর টইটম্বুর থাকে। কিন্তু এবার ভরা বর্ষায় পানি ছিল না। হাওরে মাছের বংশবৃদ্ধি না হওয়ায় ভাদ্র মাসের এই সময়ে সংকট দেখা দিয়েছে। এবার সারা বছরই মাছ কম পাওয়া যাবে। পাশাপাশি পানি না থাকায় হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে। 

এমন অবস্থায় থাকলে হাওরের জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। হাওরের বাসিন্দারা জানান, এ বছর গোটা হাওরে পানির কোনো প্রবাহ নেই। পানি না থাকায় হাওরের দৃশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। 

হাওর উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘জল ও পরিবেশ ইনস্টিটিউট’-এর চেয়ারম্যান ইনামুল হক বলেন, ‘হাওরে পানি কমে যাওয়ায় এবং প্রবাহ না থাকায় মৎস্য প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মাছের ঘাটতি দেখা দেবে। খাদ্য উৎপাদনও কমে যাবে। এতে করে আগামী প্রজন্ম খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। তা ছাড়া হাওরে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ব্যাপারে এখনই সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পড়তে হবে। 

প্রাণী ও মৎস্য বিশেষজ্ঞ আলী আজহার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হাওরের পানি কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে নদীর উৎপত্তিস্থলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ড্যাম তৈরি করে পানি আটকিয়ে দেওয়ায় প্রতিবছর হাওরে পানি কমে যাচ্ছে। এতে হাওর এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর গতানুগতিক জীবনধারায় পরিবর্তন এসেছে। এবার ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে না। 

তিনি আরও বলেন, সাধারণত বর্ষায় কর্মহীন থাকে হাওরের মানুষ। এ সময় মৎস্যজীবীসহ সাধারণ মানুষ হাওরের ভাসান পানিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এবার হাওরে পানি না আসায় মাছের উৎপাদন কমে গেছে। জেলেপল্লীতে মাছ ধরার উৎসব নেই। তাদের মধ্যে হাহাকার। 

রহমত উল্লাহ, সৈয়দ হোসেনসহ একাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, হাওরের বালিখলা মৎস্য আড়তে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হতো। দেশের নানা স্থান থেকে ক্রেতারা আসতেন। এখন ৫০ লাখ টাকার মাছও বিক্রি হয় না। কারণ মাছ নেই। পাশাপাশি ভৈরব মাছের আড়তে প্রতি রাতে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি হতো। এখন এক কোটি টাকার মাছও বিক্রি হচ্ছে না। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, এ বছর হাওরে পানি আশঙ্কাজনকভাবে কম এসেছে। ঢলের পানির স্রোতে প্রাকৃতিকভাবে মাছের প্রজনন হয়। পানি কম থাকায় বংশবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় হাওরে মাছ নেই। বিশেষ করে দেশীয় মাছের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানির সঙ্গে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর সম্পর্ক রয়েছে। তিনটি উপাদান মিলেই খাদ্য পিরামিড গড়ে তোলে। 

তিনি আরও বলেন, হাওরে পাখির আগমনসহ ব্যাঙ, কুচিয়া, বিষহীন সাপ, কচ্ছপজাতীয় প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে প্রকল্প নিয়ে বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা