রেজাউল করিম, গাজীপুর
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৫৭ পিএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৫৮ পিএম
গাজীপুরে একটি মোজা তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ফাইল ফটো
শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর জেলাটি ঐতিহ্যগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। জেলায় ছোট-বড় প্রায় পাঁচ হাজার শিল্প-কারখানার মধ্যে দুই হাজারের বেশি পোশাক কারখানা। অব্যবস্থাপনা, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় যত্রতত্র ঝুটগুদাম, বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও দায়িত্বহীনতায় গত দেড় বছরে ৯৪৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি টাকার বেশি। ঘটেছে হতাহতের ঘটনা।
জেলা ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত জেলায় ৯৪৬ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে চলতি বছরই ঘটেছে ৩৫০টি। ২০২২ সালে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৬৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা এবং চলতি বছরের ৬ মাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি ৪০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এসব অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছে অন্তত ১০ জন, আহত হয়েছে কয়েক শতাধিক বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ।
জানা যায়, গত দেড় বছরে ইলেকট্রনিক, মাটি ও গ্যাসের চুলা থেকে ৫৩, বৈদ্যুতিক গোলযোগে ৪২১, বিড়ি-সিগারেটের জলন্ত টুকরোর কারণে ৬৫, খোলা বাতির ব্যবহারে ৩, যন্ত্রাংশ ঘর্ষণজনিত কারণে ৯, শত্রুতা ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক ৫, মাত্রাতিরিক্ত তাপে ৩, মেশিনের মিস ফায়ারে ৩, চিমনির ফুলিঙ্গ থেকে ৩, গ্যাসলাইন থেকে ৬৬, যানবাহনে দুর্ঘটনাজনিত ৬ ও অন্যান্য কারণে ১১১ সহ মোট ৯৪৬টি আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শুধু বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ৪২১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, গাজীপুরের টঙ্গী, কাশিমপুর ও কোনাবাড়ী এলাকায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। এসব এলাকা অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অধিক ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ার সঙ্গে রয়েছে কয়েক হাজার ছোট-বড় ঝুটের গুদাম। এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত জলাধার না থাকায় আগুন লাগলে পড়তে হয় পানিসংকটে। এ ছাড়াও ঘনবসতি হওয়ায় সঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেন না দমকল বাহিনীর সদস্যরা। যার ফলে সঠিক সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ্ আল আরেফীন বলেন, বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো আগুন লাগার অন্যতম কারণ। এজন্য ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতার পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমাতে প্রয়োজন প্রশিক্ষণ ও কার্যকরী অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা। জেলার বেশিরভাগ পোশাক কারখানায় অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকলেও বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নেই। নেই সঠিক প্রশিক্ষণ ও মহড়ার ব্যবস্থা। অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষণ থাকলে কমসময়ে অগ্নি নিয়ন্ত্রণে কমে আসবে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ।
তিনি বলেন, গাজীপুর জেলায় আটটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন আছে। জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্প-কারখানার অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী ও রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকায় আরও তিনটি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস স্টেশন চালু করা হচ্ছে। এসব স্টেশনে কোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ে ফায়ার ট্রেনিং নিতে চাইলে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।