অদম্য
ইব্রাহিম আকতার আকাশ, ভোলা
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৩ ১১:৪৪ এএম
মায়ের হাতে ভর করে পরীক্ষা কেন্দ্রে শারীরিক প্রতিবন্ধী সিয়াম। প্রবা ফটো
জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. সিয়াম। ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। তাই চলাফেরায় ভরসা ক্রাচ আর মায়ের হাত। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও যেন অদম্য সিয়াম। প্রতিদিন ক্রাচ আর মায়ের হাতে ভর করে এইচএসসি সমমানের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও টেকনোলজি (বিএমটি) কোর্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে সে।
ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সিয়াম। এবার ধলীগৌরনগর ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএমটি কোর্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
প্রতিদিন প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে ক্রাচ আর মায়ের হাতে ভর করে পরীক্ষা দিতে উপজেলা সদরের লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসছে সিয়াম। সে পার্শ্ববর্তী তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের মাঝির পুকুর পাড় এলাকার মো. শাহজাহান-নাছিমা বেগম দম্পতির ছেলে। শাহজাহান ঢাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন, আর নাছিমা গৃহিণী। তাদের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সিয়াম সবার বড়। সিয়াম ছাড়া আরেক মেয়েও প্রতিবন্ধী। সে মোটেও চলাফেরা করতে পারে না। ভিটেমাটি ছাড়া তাদের আর কোনো জমিজমা নেই। তাই অনেক কষ্টেই চলছে সংসার। তবে পরিবারের দরিদ্রতা আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে সিয়ামের অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে।
সিয়াম বলেন, ‘ঠিকমতো চলতে পারি না। তবু প্রাথমিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পড়ালেখা করছি। এর জন্য সবসময় পরিবার আমাকে সহযোগিতা করছে। মা সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেন। কোথায়ও যেতে হলে মা-ই আমার সঙ্গে যায়। আমার স্বপ্ন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সরকারি চাকরি করার। পরিবারের অসচ্ছলতা দূর করার।’
সিয়ামের মা নাছিমা বেগম বলেন, ‘সিয়াম জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। এ ছাড়া দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়েও প্রতিবন্ধী। সিয়ামকে হাত ধরে সহযোগিতা করলে চলাচল করতে পারে। তবে বেশি হাঁটতে পারে না। তাই মাঝেমধ্যে কোলেও নিতে হয়। ছেলের লেখাপড়া চলাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কষ্ট হলেও স্বপ্ন পূরণে সব সময় ছেলেকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছি। আমি চাই প্রতিবন্ধী হয়েও আমার ছেলে কারও বোঝা না হোক। মানুষের মতো মানুষ হোক।’
ধলীগৌরনগর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আকবর হোসেন বলেন, ‘সিয়াম মেধাবী শিক্ষার্থী। তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানের থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারিভাবেও যদি সিয়ামের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়, তাহলে সে সহজে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সুস্থ-সবল ছেলেমেয়েও খুব বেশি পড়ালেখা করছে না। সিয়াম প্রতিবন্ধী হয়েও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। তার উচ্চ শিক্ষার জন্য সফলতা কামনা করছি। এ ছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সরকারি যে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা সবকিছুই দেওয়া হচ্ছে। সিয়ামের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করছি, ভবিষ্যতেও করব।