শরীফ স্বাধীন, মাগুরা
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৩ ১৩:১৯ পিএম
মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। প্রবা ফটো
অপ্রতুল পয়ঃনিষ্কাশন, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং যত্রতত্র জমে থাকা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের মধ্যে রোগী নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। উৎকট দুর্গন্ধের তীব্রতায় সারা দিনই নাক-মুখে হাত চেপে চলতে হয় রোগীর সহযোগিতায় আসা স্বজনদের। অপরিচ্ছন্ন টয়লেট-গোসলখানাগুলো বাধ্য হয়েই ব্যবহার করতে হয় রোগীদের। যত্রতত্র ময়লার স্তূপ দেখে মনে হয় এটি রোগ নিরাময়ের হাসপাতাল নয়, যেন জীবাণুর চারণভূমি।
মাগুরা মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহেল কাফী বলেন, ‘হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর রোগীর সুস্থ হওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে। পরিবেশ দূষিত হলে রোগীর ক্ষতস্থান সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আক্রান্ত হতে পারে শ্বাসতন্ত্র, কিডনি এবং সংক্রামক রোগ, যা একে ওপরকে ছড়ায়। এমন নোংরা পরিবেশে চিকিৎসা নিতে এসে অনেকে অজানা সংক্রামক ব্যাধি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে।’
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয় গেটের পাশেই জমে আছে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লাপানি। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিলিন্ডার এরিয়ায় জমে থাকা পচা পানিতে মশা ও লার্ভা খেলছে। হাসপাতালের মূল ভবনে প্রবেশ করতেই রয়েছে উন্মুক্ত ড্রেন। খোলা ড্রেন থেকে দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস বের হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ৯টি ওয়ার্ডের মেঝেগুলো অপরিষ্কার, বিভিন্ন বারান্দায় রোগীর স্বজনদের ফেলে দেওয়া ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানিতে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন নোংরা। হাসপাতালের নতুন ও পুরাতন ভবনের ছাদে স্তূপ করে রাখা হয়েছে অব্যবহৃত নষ্ট বিছানা, ফোম, ভাঙা টেবিল-চেয়ার; যা বৃষ্টির পানি জমে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তৈরি হয়েছে মশার বংশবিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ। সব মিলিয়ে এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে সাধারণ ওয়ার্ড, ডেঙ্গু ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ডসহ ইমার্জেন্সি রোগীদের চিকিৎসাসেবা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমার বড় বোন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। বোনের পাশে সারা দিন থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারলাম না। বাথরুমের যা অবস্থা আর ওয়ার্ডের দুর্গন্ধে আমি নিজেই অসুস্থবোধ করছি।’
কয়েকজন রোগী অভিযোগের সুরে বলেন, দিনে দুবার মেঝে, গোসলখানা ও শৌচাগার পরিষ্কারের কথা থাকলেও অনেক সময় দিনে একবারও করা হয় না।
অসুস্থ ছেলেকে সহযোগিতায় আসা মিনতি রানী বলেন, ‘ছেলে অসুস্থ, পাসেই বসে থাকি সারাক্ষণ। এখানে বড় সমস্যা দুর্গন্ধ। গন্ধে বুক-পেট জ্বালাপোড়া করে। এই পরিবেশে দিনে একবেলা ভাত খাই। সেটা আবার পাঁচতলা থেকে নেমে হাসপাতালের সামনে গাছতলায় বসে।’
হাসপাতালের অফিস সূত্রে জানা যায়, ভর্তি রোগী ছাড়াই প্রতিদিন বহির্বিভাগে রোগী ও রোগীর স্বজন মিলে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মানুষ আসা-যাওয়া করে। হাসপাতালের নতুন ও পুরাতন ভবন মিলে ওয়ার্ড রয়েছে ৯টি, গোসলখানা ১২টি এবং টয়লেট ৮০টি। হাসপাতালটিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে ৬৫ জন। এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা ২৫ জন।
হাসপাতালে কর্তব্যরত ডা. মেহিদী হাসান নোংরা পরিবেশের জন্য হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, রোগীদের শুধু চিকিৎসা দিলেই হবে না, তাদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও দিতে হবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাহিদ জামান বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। হাসপাতালের এ দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে স্বীকার করছি। দুর্গন্ধ ও মশার বংশবিস্তার রোধে স্প্রে করা হবে। ছাদের ওপরে স্তূপ করে রাখা পুরাতন মালামাল ডিজি অফিসের অর্ডার নিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে।’