আসাদ জামান, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৫ এএম
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৪৮ এএম
মানিকগঞ্জের রুনা আক্তার ইজিবাইক চালিয়ে পরিবারের অর্থের যোগান দেন। প্রবা ফটো
‘বাবা-মা দুজনেই বয়স্ক ও অসুস্থ। তিন বেলা অসুস্থ মা-বাবার ওষুধ, ছোট ভাই ও আমার খাবার জোগাড়ে আয় করার মতো সংসারে আর কেউ নাই। আর্থিক অনটনের কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারিনি। অভাবের সংসারের হাল ধরতে প্রবাসেও গিয়েছি। পা ভেঙে ফেরত আসায় এখন ইজিবাইক চালাচ্ছি। এর উপার্জন দিয়েই সাধ্যমতো পূরণ করতে হয় সব চাহিদার।’
এভাবেই নিজের জীবনযাত্রার কথা বলছিলেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৌলী এলাকার বাসিন্দা রুনা আক্তার (২২) নামের এক তরুণী।
পৌরসভার পৌলী এলাকার আলতাফ-জহুরা দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে রুনা চতুর্থ। আলতাফ-জহুরা দম্পতির বড় ছেলে কয়েক বছর আগে বিয়ে করে নিজ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকছেন। আরও দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ২০১৬ সালে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য জমি বিক্রি করে সেই টাকায় সৌদি আরবে যান রুনা। কিন্তু পা ভেঙে যাওয়ায় প্রবাস জীবন ছেড়ে আবার দেশে ফিরে আসতে হয় তাকে। এখন জীবন সংগ্রামের হাল ধরতে বাধ্য হয়েই ইজিবাইক চালানো শুরু করেছেন রুনা।
রুনা আক্তার বলেন, আমার বাবা-মা অসুস্থ। তারা অনেক কষ্ট করে আমাদের পাঁচ ভাই-বোনকে লালন-পালন করেছেন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। আমার একটা ছোট ভাই আছে, ও কোনো কাজ করতে পারে না। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকায় আমার ওপর তাদের দায়িত্ব পড়েছে। আমি মেয়ে মানুষ, তাই বলে কি আমার কোনো দায়িত্ব নেই। আমি তো তাদের না খাইয়ে মেরে ফেলতে পারি না। যেহেতু পড়াশোনা করার সুযোগ পাইনি তাই বাধ্য হয়েই ইজিবাইক চালাচ্ছি। প্রথমে সমাজের মানুষ নানাভাবে লাঞ্ছনা করলেও এখন আর কেউ কিছু বলে না।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ইজিবাইকটি চালাই। দুপুরে বাসায় এসে সংসারের কাজ শেষে আবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চালাই। যে টাকা আয় হয় তা থেকে পাঁচশ টাকা মালিককে দিতে হয়। বাকি টাকা দিয়ে অসুস্থ বাবা-মার ওষুধসহ সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনি। এ উপার্জন দিয়ে কোনোরকমে চলে যাচ্ছে আমাদের চারজনের সংসার।
রুনার মা জহুরা বেগম জানান, ‘আমার বড় ছেলেটি বিয়ের পর থেকেই আলাদা থাকে। আমাদের কোনো খোঁজখবর রাখে না। দুই মেয়েকে অনেক কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছি। আমি ও আমার স্বামী দুজনেই অসুস্থ থাকায় আমরা কিছুই করতে পারি না। আমার ছোট আরও এক ছেলে আছে। প্রতিদিন ওষুধসহ সংসারে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু আয় করার মতো কেউ নেই। তাই সংসারের হাল ধরার জন্য রুনা ইজিবাইক চালায়। আমাদের কথা চিন্তা করে ইজিবাইক চালিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচ চালাচ্ছে রুনা। অভাবের কারণে মেয়েটিকে বিয়েও দিতে পারছি না।’
মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কবির হোসেন জানান, রুনা তার পরিবারের জন্য খুব পরিশ্রম করে। পরিবারের অভাব পূরণে সে ইজিবাইক চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছে। ওর জন্য স্থায়ীভাবে কিছু করার জন্য মেয়র সাহেবের সঙ্গে কথা বলব।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল জানান, রুনা মেয়ে হয়ে এমন কঠিন কাজ করে সংসারের হাল ধরেছে তা প্রশংসনীয়। তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করব।