গাজীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:১২ পিএম
ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ। ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেন ২২ হাজার শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালের পর থেকে এখানে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে বিভিন্ন সময় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এতে অশান্ত হয়ে উঠেছে কলেজ ক্যাম্পাস।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে ওই কলেজে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও শেখ ফজিলাতুন নেছা ছাত্রীনিবাস উদ্বোধন করতে আসেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি সজীব হোসেন সবুজ ও তার সমর্থিতরা কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি করেন। মন্ত্রী অনুষ্ঠানে নির্বাচন দেওয়ার আশ্বাসও দেন। তিনি চলে যাওয়ার সময় সজীব হোসেন ও তার সমর্থকরা মন্ত্রীর গাড়িবহরের গতিরোধ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে এবং পুলিশ প্রহরায় মন্ত্রীর গাড়ি এলাকা ত্যাগ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ইটপাটকেলে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
ওই ঘটনার পর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ওই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। এরপর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রবিন সরদারের একক আধিপত্যে চলছে কলেজের রাজনীতি। রবিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ২৭টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বেশ কয়েকবার জেলে যেতে হয় তাকে।
রবিন জেলে যাওয়ার পর তার সঙ্গে থাকা ফেরদৌসসহ অনেকেই আলাদা চলতে শুরু করেন। কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গুঞ্জনে আলাদা আলাদা গ্রুপিং তৈরি হয়। নিজেদের আধিপত্য দেখাতে গত মাসে দুই গ্রুপের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত রবিবার বিকালে ছাত্রলীগ কর্মী ফেরদৌসকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে রবিন সরদার ও তার কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরে রাতে গাজীপুর শহরের শীববাড়ি এলাকা থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ফেরদৌসের মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে বাসন থানায় মামলা করেন। মামলায় রবিন সরদারকে ১ নম্বর আসামি করা হয়।
এ বিষয়ে রবিন সরদারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গতকাল সোমবার দুপুরে রবিন সরদার তার ফেসবুক পোস্টে ফেরদৌসের সঙ্গে একটি ছবি দিয়ে তাকে জন্মদিনের শুভচ্ছা জানিয়েছেন।
ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে চলা গ্রুপিংয়ের কারণে কলেজজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত থাকছে, যেকোনো সময় আরও বড় সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, কলেজশিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে মারধর ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। একজনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কলেজের পরিবেশ যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য পুলিশের নজরদারি রয়েছে।