শিশু আদিবা হত্যা
শেরপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:২৭ পিএম
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:১৫ পিএম
সন্তান হারিয়ে আহাজারি করছেন মা ফাতেমা বেগম। প্রবা ফটো
‘চোখের সামনে আমার কোল থাইক্কা টান মাইরা নিয়ে দুধের পুনাইডারে (শিশু) মাইরা ফেলল, আমি তাগর ফাঁসি চাই। বুকটা শূন্য অইয়া গেছে আমার। জমি নিয়া আমগর লগে ঝগড়া আছিল। কিন্তু কী দোষ ছিল আমার দুধ খাওয়া ৫ মাসের পুনাইডার। আমার মেয়েরে যারা মারল, তাগর যেন ফাঁসি হয়।’ নিজ বাড়িতে এভাবেই বিলাপ করছিলেন প্রতিপক্ষের হাতে নিহত পাঁচ মাসের শিশু আদিবার মা ফাতেমা বেগম।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের ময়ছর উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে কাঁদতে দেখা যায় তাকে।
ময়ছর উদ্দিন-ফাতেমা দম্পতির ছয় সন্তান। তাদের মধ্যে আদিবা ছিল সবার ছোট। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের একজন গত শুক্রবার বিকালে ওই গ্রামে ফাতেমার কোল থেকে আদিবাকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় আদিবার।
কান্দাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে নারীদের ভিড়। ভেসে আসছে ভারী কান্নার আওয়াজ। মেয়েকে হারিয়ে বিলাপ করছেন ফাতেমা বেগম। চোখের সামনে দুধের শিশুকে হারানোর কষ্ট প্রতিমুহূর্তে তাকে তাড়া করে ফিরছে। মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মেয়ে মৌতুসী ও মলিনা।
নাতিকে হারিয়ে কাঁদছেন ৬৫ বছর বয়সি দাদি মরিয়ম বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার নাতিকে যারা মেরে ফেলল আমি তাদরে ফাঁসি চাই। মানুষ এভাবে দুধের পুনাইরে (বাচ্চা) মারতে পারে? আসলে ওরা মানুষ না পশু। ওদের বিচার করতেই হবে।’
গত শনিবার সন্ধ্যায় কান্দাপাড়া গ্রামের বাড়িতে আদিবাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ময়ছর উদ্দিন তার ভাতিজা হামিদুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নালিতাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন। হামিদুল ইসলামের মা হনুফা বেগম ও স্ত্রী লাভলী বেগমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল সোমবার তাদের আদালতের মাধ্যমে শেরপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তারা দুজন আদিবার হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ময়ছর উদ্দিনের সঙ্গে তার ভাতিজা প্রতিবেশী হামিদুল ইসলামের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। কয়েকদিন আগে গ্রাম্য সালিশে জমির সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে ময়ছর তার বাড়ির সীমানায় টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে দেন। পরে বিকালে ময়ছর নিজেদের সীমানায় কলার চারা রোপণ করতে যান। এ সময় ফাতেমা বেগমের কোলে ছিল শিশু আদিবা। তখন হামিদুলের মা হুনুফা ও স্ত্রী লাভলী বেগম বাধা দেন। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে দেশি অস্ত্র নিয়ে হামিদুলও যোগ দেন ঝগড়ায়। উভয়পক্ষে হাতাহাতি হয়। মা ফাতেমার কোলে থাকা আদিবাকে কেড়ে নিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেলেন লাভলী বেগম। এতে শিশুটির মাথায় আঘাত লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুটিকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে শেরপুর সদর হাসপাতালে পাঠান। শেরপুরে নেওয়ার পথে তিনানী বাজার এলাকায় সন্ধ্যায় আদিবার মৃত্যু হয়।
মানবাধিকার সংস্থা সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির জেলা সভাপতি আলমগীর আল আমিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ছোট্ট শিশু আদিবা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি হৃদয় বিদারক। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত হামিদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরে তালা দেওয়া। তার স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে পাওয়া যায়নি তাদের।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, অভিযোগের পরপরই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর গ্রেপ্তার ওই দুই নারী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়েই তাদের গ্রেপ্তার করা যাবে।
গত ২ সেপ্টেম্বর ‘মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে হত্যা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে প্রতিদিনের বাংলাদেশ।