ভোলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৪৯ পিএম
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৫১ পিএম
ভোলার ইলিশা-রাজাপুর মেঘনা নদীর তীররক্ষা বাঁধের ধসে যাওয়া স্থানে বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল বস্তা ফেলা হচ্ছে। প্রবা ফটো
ভোলা সদর উপজেলায় মেঘনার তীররক্ষায় ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইলিশা-রাজাপুর রক্ষা প্রকল্পের সিসি ব্লক বাঁধের দুটি স্থান আবারও ধসে পড়েছে। এতে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশের শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা। এর আগে বাঁধ নির্মাণের সময় আরও দুটি স্থানে ব্লক ধসে পড়েছিল।
জরুরিভিত্তিতে ধসে যাওয়া স্থানে ১২ হাজার বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৫২টি বস্তা ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া শনিবার সকাল থেকে ধসে যাওয়া স্থানে সার্ভে শুরু হয়েছে।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভোলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান। তিনি জানান, উজানের পানি নামাসহ মেঘনা নদী উত্তাল হয়ে যাওয়ায় বাঁধের দুটি স্থান ধসে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরি ও লঞ্চঘাটের দক্ষিণে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের দুটি স্থানে ৭০ মিটার সিসি ব্লক ধসে বিলীন হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে এ ধস শুরু হয় বলে জানান স্থানীয়রা। এরপর বুধবার বিকাল থেকে পাউবো বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করে। ধস রক্ষা করা না গেলে মাটির বাঁধে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। আর মাটির বাঁধ ধসে গেলে ভোলা শহরে পানি প্রবেশ করবে বলে জানান স্থানীয়রা।
যে দুটি স্থানে ব্লক ধস শুরু হয়েছে সেখানে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন। এলাকাটি বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সেখানে তিনটি লঞ্চঘাট ও একটি ফেরিঘাট রয়েছে। এ ছাড়া মেঘনা রিসোর্ট নামে একটি রেস্টুরেন্টসহ প্রায় অর্ধশত দোকানপাট রয়েছে। বাঁধের অপর প্রান্তে রয়েছে জংশন বাজার, পুলিশ তদন্তকেন্দ্র, অস্থায়ী একটি নৌ-থানা ও বহুতল কয়েকটি ভবন। হঠাৎ করে ব্লক ধসের এমন ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয়রা।
স্থানীয় আমীরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল বস্তা না ফেলে জরুরিভিত্তিতে সিসি ব্লক বসানো দরকার। তাহলে ভাঙন থেকে রক্ষা করা যাবে। বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’
ব্যবসায়ী পারভেজ হোসেন জানান, ব্যবসায়ীসহ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এ ভাঙন রোধ করা না গেলে ভোলাকে নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। তাই জরুরিভিত্তিতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, উত্তর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি যখন সাগরে নামে, তখন ভোলার মেঘনা নদীতে তীব্র স্রোত হয়। মেঘনা নদীর মধ্যে দীর্ঘ চর রয়েছে, যার কারণে ইলিশা ফেরিঘাটের সামনে দুটি নদীর (ইলিশা ও মেঘনা) পাঁচটি চ্যানেলে মোহনা হয়েছে, সেখানে সারা বছর নদী অশান্ত থাকে। বর্ষার শেষ সময়ে ওই এলাকায় তীব্র স্রোত হওয়ায় তা ভয়ংকর রূপ নেয়। এ বছরও নদীর ভয়ংকর রূপের কারণে ব্লক বাঁধ ধসে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ঢাকা থেকে আসা প্রতিনিধিদল সকাল থেকে সার্ভে করা শুরু করেছে। সার্ভে শেষ হলে বোঝা যাবে বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল বস্তায় ভাঙন রক্ষা করা যাবে কি না। না হয় সিসি ব্লক বসানোর কাজ হাতে নেওয়া হবে।
ইলিশা-রাজাপুরসহ উত্তর ভোলার রাজাপুর ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের তীর সংরক্ষণ বাঁধ এবং বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে ৩৩৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানান পাউবোর প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান।