× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘বোনের করুণ অবস্থা দেখে বুকটা ফেটে যায়’

নাঈম ইসলাম, শেরপুর

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:০৭ পিএম

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:২৮ পিএম

অর্থসংকটে চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে শিকলবন্দি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার কিশোরী মেহনাজ। প্রবা ফটো

অর্থসংকটে চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে শিকলবন্দি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার কিশোরী মেহনাজ। প্রবা ফটো

ক্লাসে সবার প্রিয় ছিলেন মেহনাজ। পড়াশোনাতেও ছিলেন বেশ মেধাবী। পঞ্চম শ্রণির পর একদিন স্কুল থেকে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর আর সুস্থ হয়ে ওঠেননি। ধীরে ধীরে হয়ে যান মানসিক প্রতিবন্ধী। এই অবস্থার পেছনে আছে পরিবারটির আর্থিক অসচ্ছলতা, মানসিক রোগের উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারার আক্ষেপ। অর্থসংকটে চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে শিকলবন্দি কিশোরী মেহনাজ। চিকিৎসকরা বলছেন, তিনি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালেই সম্ভব এই রোগের চিকিৎসা।

মেহনাজ শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার প্রয়াত নূর মোস্তফা-হাওয়া বেগম দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট।

সম্প্রতি মেহনাজদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সারা দিন কারও উপস্থিতি ছাড়াই একাই কথা বলেন। কেউ কাছে গেলে মারধর করেন। শিকল খুলে দিলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এসব বিব্রতকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে শিকলে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। ডান পায়ে দীর্ঘদিন ধরে শিকল বেঁধে রাখায় পচন ধরেছে সেখানে। এখন বাঁ পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছে। অস্বাস্থ্যকর ভাঙা একটি ঝুপড়িঘরে তাকে রাখা হয়েছে।

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর দরিদ্র বড় ভাই আর ভাবিই তার একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন খাওয়া-গোসল সবই করাতে হয় বড় ভাই হাসানকে। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি তার। দুই বছর ধরে সব চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে অর্থসংকটে। নৈশপ্রহরী ও চা-দোকানি দুই ভাইয়ের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার অসম্ভব হওয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন মেহনাজ।

মেহনাজের বড় ভাই হাসান মিয়া বলেন, স্থানীয় হাসপাতাল, শেরপুর টাউনে বিভিন্ন ডাক্তারের চিকিৎসা করিয়ে কোনো লাভ না হওয়ায় আর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি তারা। পরবর্তী সময়ে অবস্থার আরও অবনতি হলে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করান। তাতেও মেলেনি কোনো প্রতিকার।

হাসান আরও বলেন, ‘বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় পাবনা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কোনো লাভ হয়নি। নৈশপ্রহরীর চাকরি করে মাত্র ৫ হাজার টাকা বেতন পাই। আমার বড় ভাই চা বিক্রি করেন। আমাদের পক্ষে বোনের চিকিৎসার খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। সমাজসেবা থেকে কিছু সহযোগিতা পেয়ে মেহনাজকে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। মাসের পর মাস তার পেছনে বাড়তি খরচ করতে হয়। কোনোভাবে যদি বোনটার সুচিকিৎসা করাতে পারতাম, তবে আমাদের খুবই উপকার হতো। বোনের এমন করুণ অবস্থা দেখে বুকটা ফেটে যায়। এত কষ্ট আর সহ্য করতে পারি না।’

‘মেহনাজের এমন অবস্থা দেখে খুবই কষ্ট হয়। যদি সরকার বা সমাজের বিত্তবান কেউ একটু চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতেন, তবে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে মেয়েটিকে হয়তো সুস্থ করা যেত। করজোড়ে অনুরোধ, মেহনাজের পাশে একটু দাঁড়ান’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসানের স্ত্রী।

প্রতিবেশী আব্দুল মোমিন বিএসসি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অসুস্থতা বাড়তে বাড়তে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন মেহনাজ। পরে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে শিকলে বেঁধে রাখে পরিবারটি। মেহনাজ কারণ ছাড়াই কখনও উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন, আবার একা একাই কথা বলেন। মা-বাবা হারা মেহনাজের পাশে বিত্তবানদের সহযোগিতা খুব প্রয়োজন।’

স্থানীয় দুলাল মিয়া বলেন, ‘মেহনাজের পরিবার অনেক দরিদ্র। দুই ভাই নিজেদের পরিবারের ভরণপোষণ করতেই হিমশিম খান। এর ওপর মেহনাজের জন্য প্রতিনিয়ত চিকিৎসার খরচ তাদের পক্ষে চালানো কঠিন।’

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েজ অব ঝিনাইগাতীর সভাপতি ও সদর ইউপি সদস্য জাহিদুল হক মনির বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া সরকারি কোনো সুযোগসুবিধা এলে তাদের পরিবারকে দেওয়ার চেষ্টা করি। নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব সাহা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিজোফ্রেনিয়া নামের এই রোগের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা একমাত্র মানসিক হাসপাতালেই সম্ভব। তাই মেহনাজকে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। আমাদের হাসপাতাল থেকে সমাজসেবার মাধ্যমে তাকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। তার চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতাল প্রয়োজন। সুচিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তার কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব। তবে যত দ্রুত সম্ভব তাকে চিকিৎসা করাতে হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা