সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:২৩ পিএম
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:১৪ এএম
ভাঙনের কবলে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা নদী। প্রবা ফটো
ফরিদপুরের সদরপুরে বর্ষা এলেই ভাঙনের চিরচেনা রূপ ধারণ করে উপজেলার পদ্মা ও ভুবনেশ্বর। কয়েক দিন ধরে কমছে নদীর পানি, বাড়ছে ভাঙন। ইতোমধ্যে উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ও চর নাসিরপুর ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী কয়েকশ একর ফসলি জমি ও তিন শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে তিনটি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুটি বাজার, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকশ ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার প্রবল ঢেউ ও স্রোতে উপজেলার ঢেউখালী ও আকটের চর ইউনিয়নের শয়তানখালী চর লঞ্চঘাট ও ঘাটসংলগ্ন পাকা রাস্তা, মুন্সীরচর, পিঁয়াজখালীর চর, আকট বাজার, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আকটের চর গুচ্ছগ্রাম, ছলেনামা গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়েছে। পদ্মার মূলস্রোত এ অংশ দিয়েই প্রবাহিত হওয়ায় এখানে পানির গভীরতা বেশি। এ কারণে ভারী ট্রলার, বাল্কহেড, লঞ্চ-স্টিমার এ পথে চলাচল করে। যে কারণে স্রোত ও ঢেউয়ে সৃষ্ট ভাঙনের তীব্রতা অব্যাহত রয়েছে।
পিঁয়াজখালী এলাকার বাসিন্দা মালেক বাছাড় বলেন, এ বছর আমাদের অনেক ফসলি জমি নদীতে ভেঙে গেছে। নদীর এ পাড়ের গভীরতা বেশি থাকায় লঞ্চ-স্টিমার, বড় বড় জাহাজ এখান দিয়েই চলাচল করে। এ কারণে পানির স্রোতে ও ঢেউয়ে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙন প্রায় এক মাস থেকেই অব্যাহত আছে।
নারিকেলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন জানান, প্রতিবছরই পদ্মার ভাঙনে এ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। এ বছর ইতোমধ্যে দুই থেকে তিন শতাধিক পরিবার নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে। ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনে নদীর গতিপথ পাল্টে যাওয়ায় এ ভাঙনের শুরু। ইতোমধ্যে নদীভাঙনে কয়েকশ পরিবার উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।
ঢেউখালী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বয়াতি বলেন, নির্মাণাধীন পাকা রাস্তাসহ আমার ইউনিয়নের শয়তানখালী চরের লঞ্চঘাট ভেঙে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে ঘাটটি নতুন জায়গায় সরিয়ে আনা হয়। এরই মধ্যে মুন্সীরচর, পিঁয়াজখালী গ্রামের কয়েকশ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
আকটের চর ইউপি চেয়ারম্যান আসলাম ব্যাপারী বলেন, আকটেরচর বাজার, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আকটের চর গুচ্ছগ্রাম ও ছলেনামা গ্রামে ভাঙন অব্যাহত আছে। এ পর্যন্ত ১৭টি ঘরবাড়ি ও প্রায় ২০০ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থপ্রতিম সাহা বলেন, সদরপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে নদীভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। তারপরও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। কয়েক দিন ধরে নতুন করে আবারও নদীভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি প্রধান প্রকৌশলীকে অবগত করেছি। দ্রুতই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, ভাঙন-কবলিতদের তালিকা করে ইতোমধ্যে ১৯৮ পরিবারকে একে বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৩০০০ টাকা করে সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। আরও সাহায্য ও ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।